বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
বিশ্বের যেসব মেয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ক্রিকেট খেলায় আসতে পারেন না, তাঁদের জন্য জ্বলন্ত উদাহরণ আবতাহা মাকসুদ।
ক্রিকেট বিশ্বের নতুন এক সংস্করণ ‘দ্য হান্ড্রেড’-এ অংশগ্রহণ করেই সংবাদের শিরোনামে চলে আসেন বার্মিংহ্যাম ফিনিক্সের স্কটিশ এই মহিলা ক্রিকেটারটি। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই মুসলিম ক্রিকেটার হিজাব পরেই খেলতে নেমে সবার নজর কেড়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা ব্রিটেনের প্রথম হিজাবি ক্রিকেটার হিসেবেও নিজেকে তুলে ধরেন তিনি। তাঁর লক্ষ্য শুধু আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরা নয়, আবতাহা মাকসুদ চান বিশ্বের অন্য মুসলিম মেয়েরাও যেন তাকে দেখে ক্রিকেটে এগিয়ে আসেন।
সম্প্রতি বিবিসিতে শিশুদের জন্য সম্প্রচারিত হওয়া অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি ব্যাখ্যা করেন, হিজাব প্রতিটি মুসলিম মহিলার জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।
বাবা-মা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হলেও ১৯৯৯ সালে স্টকল্যান্ডের গ্ল্যাসগোতে জন্ম হয় আবতাহার। মাত্র ১১ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাব পোলকে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার শুরু। ওই ক্লাবে যোগ দেওয়ার ৪ মাসের মধ্যে স্কটল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৭ দলে ডাক পান তিনি।
সে-সময় তাঁর বয়স ছিল ১২। ২০০৮ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাঁর অভিষেক হয় স্কটল্যান্ডের দলে। জাতীয় দলের হয়ে ১৮টি আন্তর্জাতিক টি-২০ ম্যাচ খেলে তুলে নেন ২৩টি উইকেট।
তাইকোয়ান্ডোতে ব্ল্যাক বেল্টও আছে তাঁর। ২০১৪ গ্ল্যাসগো কমনওয়েলথ গেমসে স্কটল্যান্ডের পতাকাও বহন করছিলেন। ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরুর দিকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবতাহা বলেন, ‘আমি যেখানে থাকতাম, সেখানে মেয়েদের ক্রিকেটের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না।
আমি কিন্তু মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি। বাবা ও ভাইয়ের সমর্থন পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়ে খেলা চালিয়ে যাই। পরে তার সুফলও হাতেনাতে পেয়েছি।’
হিজাব পছন্দ হওয়ার কারণ হিসেবে আবতাহা বলেন, ‘যখন ১১ বছর বয়সে আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন মাকে হিজাব পরতে দেখতাম। আমিও সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় হিজাবকে বেছে নিয়েছিলাম। আমি ১১ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে হজে যাই। তখন থেকেই আমি হিজাব পরার শিক্ষা পাই। ওই সময় আমার কাছে হিজাব পরা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এখনও তেমনই আছে এবং আমি হিজাব ছেড়ে দেইনি।’
আবতাহা গ্লাসগো ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তিনি দন্ত চিকিৎসায় পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কটল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। যদিও ক্রিকেটের জন্য তিনি হিজাব ছাড়েননি। এ ব্যাপারে আবতাহা বলেন, ‘ক্রিকেটের সঙ্গে তার হিজাবও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার সময় হিজাবে তাঁর কোনও সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি। এমনকী তাঁর হিজাব পরা নিয়েও জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে কখনও কোনও সমস্যা কিংবা বিবাদ হয়নি।
একদিকে হিজাবের বিরোধিতা করে উজবেকিস্তান, ফ্রান্স, জার্মানি-সহ ১৪০ কোটির ভারতবর্ষের একটা শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত গলা ফাটাচ্ছেন। কর্নাটকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড়ও তুলেছিলেন বেশকিছু কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতারা।
তাঁদের দাবি, এই হিজাবের মাধ্যমে আসলে একজন মহিলার কাছ থেকে তাঁর স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়। ঠিক সেখানেই ক্রিকেট খেলার মধ্যেও হিজাবের গুরুত্ব নিয়ে আবতাহা মাকসুদ শিশুদের নিয়ে বিবিসি-র এক শোয়ে হাজির হয়ে হিজাব পরা ইসলামিক ঐতিহ্য সম্পর্কে একটি বইয়ের তাৎপর্য সবার সামনে তুলে ধরেন।
তিনি ফারহানা ইসলাম এবং নাবিলা আদানির লেখা, ‘নট নাও নূর’ বইটি বেডটাইম স্টোরিজ শোতে পড়েন। সেখানে নূর নামের একটি মেয়ের গল্প বলেন। যে সব সময় ভাবে তার পরিবারের মহিলারা কেন হিজাব পরে? তাঁর মতে, ‘এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় কেন হিজাব মুসলিম মহিলাদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে, আপনি একজন ইমানদার এবং এই হিজাব আপনাকে একজন মুসলিম হিসাবে একটি স্পষ্ট পরিচয় দেয়।’