বিজনেসটুডে ২৪ প্রতিনিধি
সিলেট: ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আজ রবিবার আবারও ভূমিকম্প হয়েছে সিলেটে।
ভোররাত ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে এ ভূকম্পন হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮।
এর আগে শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলে চারবার কম্পন অনুভূত হয়। এর মধ্যে রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ কম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মুমিনুল ইসলাম জানান, আজ ভোররাত ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে মৃদু কম্পনটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮। ঢাকা থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেটের সীমান্তবর্তী ডাউকি এলাকায় বলে জানান তিনি।
এর আগে গতকাল শনিবার সকাল ১০ টা ৩৬ মিনিট, ১০টা ৫০, ১১টা ৩০ মিনিট, ১১টা ৩৪ ও বেলা ১টা ৫৮ মিনিটে সিলেটে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে কম্পনের সর্বোচ্চ মাত্রা ৪ দশমিক ১ ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তিন প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বাংলাদেশের ডাউকি ফল্ট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূত্বকে জমে থাকা হাজার বছরের সঞ্চিত শক্তি রূপ নেয় ভূমিকম্পে। এই শক্তি একবারে বের হলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির আশংকা বিশেষজ্ঞরা বহুবার ব্যক্ত করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার মনে করেন, ভূ-অভ্যন্তরে সঞ্চিত শক্তি সামান্য একটু একটু করে বের হয়ে আসা কিছুটা হলেও স্বস্তির। তিনি বলেন, ‘যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়েছে, এই শক্তি যদি একবারে বের হয়ে আসে, তাহলে বাংলাদেশের বিশেষ করে জনবহুল ঢাকার জন্য খুবই বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি করবে।’
তিনি জানান, ভূতাত্ত্বিক কাঠামো অনুযায়ী বাংলাদেশে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় অবস্থান করছে। ইন্ডিয়া এবং বার্মা প্লেটের সংযোগস্থল বাংলাদেশের নিচ দিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হাওর ও মেঘনা নদী বরাবর এই দুটি প্লেটের সংযোগস্থল। উত্তরে হিমালয় পাদদেশও আছে একটি সংযোগস্থল। এই তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান।
সিলেটের ভূমিকম্পের স্থান ও প্রধান দুটি ভূমিকম্পের উৎসের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, শিলং মালভূমি যেটা বলা হয়, সেটি ক্ষুদ্র একটা প্লেট। এটি ডাউকি ফল্ট, সেটাও একটা প্লেট বাউন্ডারি। সিলেটের ভূমিকম্প হয়েছে ডাউকি ফল্টে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘সেখানে আমাদের দেড় যুগের গবেষণা বলছে, আমাদের প্রধান দুটি উৎস রয়েছে বিপজ্জনক ভূমিকম্পের। একটা হচ্ছে ডাউকি ফল্ট, আরেকটা হচ্ছে সিলেট থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল।
‘ডাউকি ফল্ট ও চট্টগ্রামের এখানে ৫০০ থেকে হাজার বছর সময়ে ভূত্বকে যে শক্তি সঞ্চিত হয়ে রয়েছে, সেই শক্তি তো বের হতেই হবে। আজ হোক আর কাল হোক, এই শক্তি বের হতেই হবে, এর কোনো বিকল্প উপায় নেই।’
তিনি বলেন, ‘এই পুরো শক্তি আংশিকভাবে বের হলে আমার কিছুটা নিরাপদে থাকব। সাধারণত সঞ্চিত যে শক্তি থাকে, তার ৫০ ভাগ যদি একবারে বের হয়, সেটা বিপজ্জনক অবস্থায় নিয়ে যাবে।’
অধ্যাপক আখতার জানান, যে পরিমাণ শক্তি আমাদের ভূগর্ভে জমা রয়েছে, সেটি একবারে বের হলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।
তবে সেটা না হয়ে ছোট মাত্রার এসব ভূমিকম্প পরিবেশে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি।