শামসুল ইসলাম
চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার জট নিরসনে সব ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে যাওয়া হবে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে। সেখান থেকেই দেওয়া হবে ডেলিভারি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রবিবার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে আমদানি পণ্যবাহী সব কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামানোর পর সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হবে ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে। এর ফলে বন্দরে বিরাজমান জট কমে আসবে বলে আশাবাদী তারা।
বন্দর সূত্র জানায়, করোনা বিস্তার প্রতিরোধে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট এড়াতে গত ১৬ জুলাই সব ধরনের আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার বেসরকারি ডিপো থেকে খালাসের অনুমতি চেয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে রাজস্ব বোর্ডে চিঠি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঈদুল আজহার ছুটি ও কঠোর বিধিনিষেধ শুরুর পর বন্দর থেকে কন্টেইনার ডেলিভারির গতি একেবারে শ্লথ হয়ে পড়ে। ফলে বন্দরে দেখা দেয় কন্টেইনার জট। সব মিলিয়ে বন্দরের কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস হলেও অপারেশনাল কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখতে ধারণ ক্ষমতার ৩০ শতাংশ খালি রাখতে হয়। কিন্তু রবিবার সকাল পর্যন্ত সেখানে কন্টেইনারের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪৩ হাজার ৫০০ টিইইউস।
এনবিআর সূত্র জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে নৌ-মন্ত্রণালয়ের চিঠির গুরুত্ব বিবেচনা করে সব ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি ডিপো থেকে খালাস নেওয়ার ব্যাপারে রবিবার এনবিআর থেকে এক অফিস আদেশ জারি করা হয়। এনবিআর-এর দ্বিতীয় সচিব (কাস্টমস নীতি) মোহাম্মদ মেহরাজ উল আলম সম্রাট স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দরে সৃষ্ট কন্টেইনার জট নিরসনের লক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পত্রের সুপারিশের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে আগত সব ধরনের পণ্য চালান সংশ্লিষ্ট কন্টেইনার চট্টগ্রামে অবস্থিত ১৯টি অফডকে (বেসরকারি আইসিডি) সংরক্ষণ, আনস্টাফিং এবং সেখান থেকে খালাস প্রদানের অনুমতি প্রদান করা হলো।
অফিস আদেশে দুটি শর্তও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। তা হলো- অফডকসমূহে স্থানান্তরের সময় শতভাগ কন্টেইনার স্ক্যানিং করা এবং স্ক্যানিং রিপোর্ট যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা, অফডকে স্থানান্তরিত সব কমার্শিয়াল পণ্য চালান আবশ্যিকভাবে কাস্টম হাউজ, চট্টগ্রাম এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে যৌথভাবে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আগামী ৩১ আগস্টের এ আদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলে অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়।
সব ধরনের আমদানি পণ্য অফডকে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এনবিআর-এর অফিস আদেশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, গত বছর এ ধরনের পরিস্থিতিতে বন্দরে বড় ধরনের কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হয়েছিল। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আমরা আগেভাগেই এ বিষয়ে এনবিআর-এর কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। রবিবার এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বন্দরে আসা সব ধরনের আমদানি পণ্যের কন্টেইনার অফডকগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই আমদানিকারকরা এসব পণ্য ডেলিভারি নেবেন। তিনি জানান, এনবিআর-এর এ সিদ্ধান্তের ফলে বন্দরে গত বছরের মতো পরিস্থিতি হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে এনবিআর-এর এই অফিস আদেশের পর চট্টগ্রামের বেসরকারি আইসিডিগুলোও অতিরিক্ত কন্টেইনার গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। তবে বর্তমানে সেখানেও প্রচুর কন্টেইনার জমে আছে। চট্টগ্রামে ১৯টি বেসরকারি আইসিডিতে কন্টেইনারের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউস। বর্তমানে সেখানে ৫৩ হাজার ৮৪৫ টিইইউস কন্টেইনার রয়েছে। এর মধ্যে শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে ১২ হাজার ৯৯৩ টিইইউস কন্টেইনার। এ অবস্থায় সব ধরনের পণ্যের কন্টেইনার অফডকে রাখতে আপাতত কোনো সমস্যা হবে না।