বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:পশ্চিমবঙ্গের চাঞ্চল্যকর আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলার রায়ে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে আজীবন মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণা করতে গিয়ে শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস বলেছেন, “বিচার ব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব হল আইনের শাসনকে রক্ষা করা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, জনমতে বয়ে যাওয়া নয়। নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতহীন থাকা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। বিচার চলাকালীন কী তথ্য প্রমাণ ও সাক্ষ্য পেশ করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করেই রায় দেওয়া হয়, জনমত বা আবেগের প্রভাবে নয়। পাশাপাশি, আদালতকে অভিযুক্তের অধিকার এবং পরিস্থিতির কথাও মাথায় রাখতে হয়। এও বিবেচনা করতে হয় যে এই রায়ের কী বৃহত্তর প্রভাব পড়তে পারে।
বিচারক অনির্বাণ দাস আরও বলেন, “আধুনিক ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের উচিত ‘চোখের বদলে চোখ’ বা ‘দাঁতের বদলে দাঁত’ বা ‘নখের বদলের নখ’ বা ‘প্রাণের বদলে প্রাণ’- এর মতো প্রাচীন প্রতিশোধমূলক প্রবৃত্তি থেকে উপরে ওঠা। আমাদের দায়িত্ব হল বর্বরতাকে বর্বরতা দিয়ে মোকাবিলা না করে, জ্ঞান, সহমর্মিতা এবং ন্যায়ের গভীরতর উপলব্ধির মাধ্যমে মানবতাকে উন্নীত করা। একটি সভ্য সমাজের মানদণ্ড প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতায় নয়, বরং সংস্কার, পুনর্বাসন এবং সর্বোপরি আরোগ্যের ক্ষমতায় নিহিত”।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক পড়ুয়ার খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে মৃত্যুদণ্ডই দেবে আদালত। কিন্তু শেষমেশ দেখা যায়, শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাস তা করেননি। বরং রায় ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট ভাবেই জানিয়েছেন, সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ দেখে তাঁর মনে হয়নি, এটা বিরলতম বিরল অপরাধ।
বিচারক তাঁর রায়ে আরও বলেছেন, “এহেন পরিস্থিতিতে আদালত মনে করে, প্রসিকিউশনের মৃত্যুদণ্ডের আবেদনে সাড়া দেওয়া উপযুক্ত হবে না। এটা ঠিক যে ভুক্তভোগীর পরিবারের শোক ও কষ্ট অপরিসীম, কোনও সাজাই তা পুরোপুরি প্রশমিত করতে পারবে না, তবু আদালতের দায়িত্ব এমন একটি সাজা ঘোষণা করা যা অপরাধের গুরুত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত এবং প্রতিষ্ঠিত আইনি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ”।