ঢাকা: অতিমারীতে সংগঠন হিসেবে ই-ক্যাব এর অবদানের কথা অবলীলায় স্বীকার করলেন সাধারণ ভোটার, স্বতন্ত্র প্রার্থী, সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং ঘোরতর সমালোচকেরাও। সংগঠনটির ভবিষ্যত নিয়ে সদস্যদের মধ্যে ইতিবাচক উচ্ছ্বাস প্রকাশের মধ্য দিয়ে সোমবার রাতে বনানীর ‘সাজনা’য় অনুষ্ঠিত হলো ই-কমার্স ইন্ড্রাস্ট্রি মিটআপ।
আগামী ১৮ জুনের ই-ক্যাব চতুর্থ দ্বি-বার্ষিক কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এই মিটআপটি সঞ্চালনা করেনন আজকের ডিল ও বিডিজবস প্রতিষ্ঠাতা এবং বেসিস এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর। অনুষ্ঠানে সবাইবে অভ্যর্থনা জানান স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজওয়ানা খান।
অনুষ্ঠানে এবারের ভোটে ৩৬ প্রার্থীর অধিকাংশই তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন। আলাদাভাবে অনানুষ্ঠানিক ভাবে দুই প্যানেল সদস্যরাও ভোটারদের মন জয় করতে বক্তব্য দেন একসঙ্গে। তবে শুরুতেই ভবিষ্যত নেতৃত্ব নিয়ে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন ভোটাররা। প্রার্থী ও ভোটার সবার কণ্ঠেই ফিরেছে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে আজকের ই-ক্যাব এর সুসংহত অবস্থান এবং অতিমারীতে সংগঠনটি জাতীয় প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রেখেছে সে বিষয়টি। করোনায় ব্যবসায় চালিয়ে নিতে পারায় ই-কমার্সকে জরুরী সেবা হিসেবে ঘোষণা ও বিশেষ পাশ পাওয়ার বিষয়টি ই-ক্যাবকে প্রকারান্তরে অন্য সব জাতীয় সংগঠনের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলেও মনে করছে বলে মত দিয়েছে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা। তাই দু-একটি প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি এই অর্জনকে ম্লান করতে পারে না বলেও মত দিয়েছেন তারা।
বক্তব্যে ই-ক্যাব ভোটে সবাই ইতিবাচক থাকবেন এবং কেউই নেতিবাচক অবস্থান গ্রহণ না করে অভিজ্ঞ-যোগ্য এবং নিবেদিত প্রার্থীদেরই বেছে নেবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, বিসিএস প্রাক্তন সভাপতি শাহিদ উল মুনির এবং ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার।
ই-ক্যাবের অগ্রযাত্রা-কে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনটির বর্তমান নেতৃত্বের প্রশংসা করার পাশাপাশি ভবিষ্যত নেতৃত্বের সফলতা সংগঠনটিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে মত দিয়েছে এই খাতের সমালোচক হিসেবে পরিচিত টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষার। নিজ অবস্থানে সফল ভোটারদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বেসিস পরিচালক আবু দাউদ খান ও রকমারি ডটকম প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুর রহমান সোহাগ।
প্রার্থীদের পক্ষে প্রথমেই বক্তব্য রাখার সুযোগ পান চেঞ্জমেকার্স টিমের সদস্যরা। মনোযোগ দিয়ে সেই বক্তব্যগুলো শোনার পাশাপাশি মাঝে মাঝেই তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে দেখা যায় অগ্রগামী প্যানেল সদস্যদের। এমন ঘটনাকে ‘সম্প্রীতি’র অনন্য নজির হিসেবে উল্লেখ করেন উপস্থিত সদস্যরা।
প্যানেলের বাইরেও যারা ই-ক্যাবের শুরু থেকেই নিবেদিত প্রাণ তাদের নিয়ে উপস্থিত শ্রোতা-দর্শকদের সামনে দ্বিতীয় সফায় হাজির হয়ে নিজে থেকেই জবাদিহিতার জায়গা থেকে বক্তব্য রাখেন শমী কায়সার।
নির্বাচন কমিশনে আবেদন জানিয়ে প্রার্থীতা ফি কমিয়ে আনার জন্য আজকে ভোটে ৩৬ প্রার্থীর অংশগ্রহণ এবং সংগঠন নিয়ে সদস্যদের আগ্রহ প্রকাশ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, আজ আমি আমাদের প্রথম প্রেসিডেন্ট রাজীব ভাইকে স্মরণ করছি। কারণ তিনি ই-ক্যাবের সভাপতি পদ ছাড়ার পরও আমি তার কাছ থেকে অনেকে সহযোগিতা পেয়েছি। পাশাপাশি আজকে ই-ক্যাব যতটা ভাইব্রেন্ট অবস্থানে এসেছে তাতে লাস্ট ইসি ও কমিটির অবদান। তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। যদিও এটি একটি থ্যাংকলেস জব। সব সদস্যদের মধ্যে দুই-একজন যদি দুর্নামের কাজ করে তাতে কমিটির দোষ দেয়ার উপায় নেই। তারপরও এটা রুখতে আমরা আগামীতে সদস্যপদ নিশ্চিত করার আগে ছয় মাস নজরদারিতে রাখা হবে। কাজের যে জায়গাগুলোকে গ্যাপ ছিলো তা পূরন করেই এগিয়ে যাবো। সবাইকে সাথে নিয়েই তা করবো। তবে সবাইকে অনুরোধ করবো আমরা কেউ যেন কাউকে আক্রমণ করে, অসম্বান করে কথা না বলি। কেননা দিন শেষে আমরা সবাই এক। একসঙ্গেই ই-কমার্স খাতকে এগিয়ে নিতে চাই।
অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের প্রাণচাঞ্চল্যে ই-ক্যাব প্রাণ সদস্য এবং নিজ মেধায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের নিয়ে ভোটে জয়ী হয়ে ই-ক্যাব এর চলমান কাজগুলো সম্পন্ন করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন অগ্রগামী দলনেতা। সংগঠন করার কারণে তিনি এবং তার সহযোদ্ধা আব্দুল ওয়াহেদ তমাল নিজেদের ব্যবসায় সম্প্রসারণ না করে কীভাবে সংগঠনের সদস্যদের ব্যবসায় টেনে তুলতে নীতি থেকে শুরু করে ই-কমার্স কাঠামোকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে কাজ করেছেন সে বিষয়টি তুলে ধরেন শমী কায়সার।
তার পরে ই-ক্যাব অর্থ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠা সময়ের মর্মস্পর্শী ঘটনা তুলে ধরে বলেন, যখন আমরা ই-ক্যাব গঠন করি, তখন নিবন্ধন কার্যক্রম বাবদ দুই দিনের মধ্যে একটা মোটা অংকের অর্থ জোগাড় করতে হবে। তখন আমি, তমাল এবং রাজিব ভাই এই অর্থ ভাগ করে দেই। যখন জানতে পারি, রাজীব ভাই তার স্ত্রী’র স্বর্ণলঙ্কার বেঁচে তার ভাগের অর্থ জমা দিয়েছেন তখন আমার চোখে পানি চলে আসে। তবে আজ আমরা গর্বিত যে, গত ১০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আমার আজ ই-ক্যাবকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি, আজকে ৩৬ জন ই-ক্যাব স্টাররা নেতৃত্ব দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এরপর অগ্রগামী প্যানেল থেকে কেন ভোটে দাঁড়ালেন তার কারণ তুলে ধরেন ফুডপান্ডা সহ-প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা আম্বারীন রেজা ও পেপার ফ্লাই সহ-প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার হাসান।
একই প্যানেলের প্রার্থী দেশের প্রথম অনলাইন ফার্মেসি ডায়াবেটিস স্টোর সহ প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ সাহাব উদ্দিন, ব্রেকবাইট সহপ্রতিষ্ঠাতা আসিফ আহনাফ, কমপিউটার জগৎ টেকনলোজিস প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, ডিজিটাল হাব প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ সাইদুর রহমান, ফোকাস ফ্রেম প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রুহুল কুদ্দুস ছোটন এবং অর্নব মোস্তাফা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে ১৮ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ৫ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৪ জনই ই-ক্যাব বর্তমান কমিটির কাজে ই-ক্যাবে আগ্রহ প্রকাশ করার কথা তুলে ধরেন। সংগঠনের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে কাজ করে নিজেকে ঋদ্ধ হওয়ার কথা ব্যক্ত করেন ক্রাফটম্যান সল্যুশন প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ সাজ্জাদুল ইসলাম। ব্যবসায় সফল হয়ে এখন ই-ক্যাবে সময় দেয়ার আগ্রহের কথা জানান সওদাগর ডটকম প্রতিষ্ঠাতা আরিফ চৌধুরী ও যাচাই ডটকম প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আজিজ। মেনেসেন মিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী তৌহিদা হায়দার নিজের জন্য ভোট চাইলেও আইএক্সপ্রেস সিইও কামরুল ইসলাম কবিতা দিয়ে শেষ করেন বক্তব্য। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ছন্দে ছন্দে তিনি বলেন, “পরিবর্তনের ধারায়, সদস্য যেনো না হারাই। সদস্য বাড়িয়ে ওনারা থাকবেন দাঁড়িয়ে। আর অগ্রগামী যদি থাক এগিয়ে, সদস্যরা থাকবে না পিছিয়ে; সদস্যদের গণ্য করে ওনারা থাকুন ধন্য হয়ে।”
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি