Home কৃষি ইউরিয়া সারের মজুদ চাহিদার তিনগুণ

ইউরিয়া সারের মজুদ চাহিদার তিনগুণ

 বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) কাছে চাহিদার তুলনায় তিনগুণ ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২০১৯-’২০ অর্থবছরে অন্তর্ভুক্ত প্রকল্পগুলোর এ পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
সভায় বলা হয়, বিসিআইসি’র কাছে বর্তমানে ৯ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। আর পিক সিজনে দেশে প্রতিমাসে ইউরিয়া সারের চাহিদা মাত্র ৩ লাখ মেট্রিক টন। সে-হিসাবে মজুদের পরিমাণ চাহিদার তিনগুণ।

এছাড়া, আমদানির মাধ্যমে আনা সারও পাইপ লাইনে রয়েছে। সব-মিলিয়ে দেশে পর্যাপ্ত পরিমান ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে বলে পর্যালোচনা সভায় জানানো হয। শিল্প সচিব মোঃ আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে এ সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, শিল্প-মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কর্পোরেশনের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ৫০টি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। এরমধ্যে ৪৬টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ৩টি কারিগরি এবং ১টি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্প রয়েছে। সবমিলিয়ে এসব প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমান ছিল ১ হাজার ৩শ’ ৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এরমধ্যে জিওবিখাতে ১ হাজার ১শ’ ৬৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা, প্রকল্প সাহায্যখাতে ৫৬ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নখাতে ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

সভায় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় কৃষক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে দ্রুত বিসিআইসি’র বাফার গুদাম নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়। এছাড়া, বিকল্প উৎস থেকে চিনি উৎপাদন, চামড়া শিল্পের অনুকূলে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জন, গুণগতমান বজায় রেখে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণের স্বার্থে মনিটরিং জোরদার, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দ্রুত অর্থ ছাড় ও ব্যয়, দরপত্র আহবান, কেন্দ্রিয়ভাবে প্রকল্পের বাস্তবায়ন তদারকি, প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রকল্প এলাকায় অবস্থান নিশ্চিতকরণসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়।

সভায় জানানো হয়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সাভার চামড়া শিল্পনগরির সিইটিপি নির্মাণ শেষ হবে। প্রকল্প সমাপ্তির সাথে সাথে ট্যানারি মালিকরা যাতে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারে, সে লক্ষ্যে মক-অডিটে প্রাপ্ত দুর্বলতাগুলো তাদেরকে লিখিতভাবে জানানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।
একইসাথে এসব দূর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি ট্যানারিগুলোতে পানির অপচয়রোধে ওয়াসার রেটে পানির ট্যারিফ ধার্য্য করে দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।

এ সময় শিল্পমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পুরোনো আমলাতান্ত্রিক মানসিকতা পরিহার করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে শিল্প মন্ত্রণালয় অনেক দূর এগোলেও এখনও বাস্তবায়ন কাজে কাক্সিক্ষত গতি আসেনি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদেরকে সেবক হিসেবে কমিটমেন্টের সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি সারের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিকল্প যোগানের উৎস খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেন। নির্ধারিত সময়ে চামড়া শিল্পনগরি প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জনের বিষয়টি ট্যানারি মালিকদের ওপর ছেড়ে দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন শিল্পমন্ত্রী।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের প্রকল্প এলাকায় অবস্থানের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, প্রকল্প পরিচালকদের কথা ও কাজে মিল থাকতে হবে। চিনি শিল্প লাভজনক করতে চিনি কলগুলোতে বার মাস উৎপাদন চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আখের পাশাপাশি সুগারবিটসহ অন্যান্য বিকল্প উৎস থেকে চিনি উৎপাদনের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বিশ্বের চিনি উৎপাদনকারী দেশগুলোর প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা নিয়ে তা রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি কলগুলোতে কাজে লাগানোরও পরামর্শ দেন। একইসাথে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর/সংস্থায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেন।