তাপস প্রান্ত
চট্টগ্রাম: দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখার পর অবশেষে ইট বিক্রি শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের ইটভাটা গুলোতে। অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে বন্ধ করলেও, চুপিসারে বিক্রি শুরু করেছেন ভাটার মালিকেরা।
গেল ২৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ও জরিমানার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে ইট বিক্রি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি।
ইট বিক্রি বন্ধ থাকায়, চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ড ও নির্মাণাধীন দালানের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে যেমন উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়ে, তেমনি ইট ভাটার মালিকেরাও লোকসানের মুখোমুখি হয়।
ইট বিক্রির শুরুতে বেশি দামে ইট বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, বিক্রি বন্ধের আগে পিকেটের দাম ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা তা এখন ৯ হাজার টাকা, ১নং পোড়া ইটের দাম ছিল ৭ হাজার ৩০০ এখন ৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পিবিএম ব্রিকসের মালিক ইউনুস বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার কারণে আমাদের লোকসান হয়েছে। আমাদের ফিল্ডে সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ইট পোড়ানো হয়। বর্তমানে ইটের কাঁচামালের দাম বাড়তি তাই ইটের দামও কিছুটা বেড়েছে।
সাতকানিয়ার ঠাকুরদীঘির এমআরবি ইটভাটার ম্যানেজার রিন্টু বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামে ৫শ’ ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় প্রায় ৬ লাখের অধিক শ্রমিক কাজ করেন। ইট বিক্রি বন্ধ রাখার কারণে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের পাওনা বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না। শ্রমিকদের কর্ম সচল রাখতে আমরা আবার ইট বিক্রি শুরু করেছি।
জানাযায়, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ইটের ব্যাপক চাহিদা থাকে। এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ভাটার মালিকেরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই, কম উচ্চতার চিমনিতে ইট পোড়ায়। বেশিরভাগই অবৈধভাবে ড্রাম চিমনি ব্যবহার করে। সবচেয়ে ভয়ংকর হলো, মানব বসতির মধ্যে ইটভাটা করে, ধানী জমিতে, নদীর ধারে ইটভাটা করে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফলে মানুষের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ইটভাটার আশপাশের ফসল, গাছপালা মরে যায়।
অবৈধ ইটভাটা বন্ধে, পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে। ওই রিটের শুনানিতে গেল বছরের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া গড়ে ওঠা সব ইটভাটা বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে যেসব ইটভাটা জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও পাহাড়ের মাটি ব্যবহার করছে তাদের তালিকা দেয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর।