বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের ১৫তম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর রামগড়। ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সেভেন সিস্টারখ্যাত তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে দেখছেন রামগড় স্থলবন্দরটিকে।
রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণের ছোঁয়ায় পার্বত্যাঞ্চলের লাখো মানুষের আর্থিক উন্নতির দ্বার খুলে যাবে এমনটাই আশায় অপেক্ষা। পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দুইদেশের আমদানি-রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশের পার্বত্য খাগড়াছড়ি রামগড়-ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রূম মহকুমা শহর এর দু’দেশের শুল্ক স্টেশনটি দ্রুত চালুর দাবিও রয়েছে।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৭ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করে দুই বছরের মধ্যে সেতুটি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও করোনা মহামারিতে কয়েক মাস নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় দীর্ঘ ৩ বছর পর সেতুটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সেতু নির্মাণ হওয়ার পরই বহু প্রতীক্ষিত বাংলাদেশের রামগড়-ভারতের সাব্রুম স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু হবে।
ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশচন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় অর্থায়নে ৮২ দশমিক ৫৭ কোটি রুপি ব্যয়ে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দীর্ঘ ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের দুই লেন বিশিষ্ট এক্সট্রা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেতুটিতে মোট পিলার রয়েছে ১২টি, এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি।
ফেনী নদীর উপর নির্মাণাধীন এই ব্রিজ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, ব্যবসা, সাংস্কৃতিক, উচ্চ শিক্ষা, পর্যটনসহ সু-সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সজীব কান্তি রুদ্র এ প্রতিনিধিকে বলেন, রামগড় স্থলবন্দর পুরোদমে চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুই বাংলার মানুষ উপকৃত হবে।
রামগড় পৌর মেয়র মোহাম্মদ শাহজাহান কাজী রিপন জানান, মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় দুই দেশের সীমান্তবাসীরা আশার আলো দেখছেন। দ্রুত বন্দর অবকাঠামো নির্মাণ হলে রামগড়বাসীসহ লাভবান হবে পৌরসভা। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ কর্মসংস্থান।
স্থলবন্দরের পাশের রামগড় চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রামগড় স্থলবন্দর চালু হলে দুই দেশ লাভবান হবে। আমাদের যেসব পণ্য ভারতে চাহিদা রয়েছে সেসব পণ্য এখান থেকে পাঠানো যাবে। আবার ভারতের অনেক পণ্য যেমন— চাসহ কৃষি পণ্য, মসলা জাতীয় সব পণ্য আমাদের দেশে আনা যাবে। এতে আমরাও লাভবান হবো।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফেনী নদীর খাগড়াছড়ির রামগড় ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম অংশে ১২৮ কোটি ৬৯ লাখ ভারতীয় মুদ্রায় ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্যের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে,ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ আগামী ৫ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কধা রয়েছে। নির্মাণকাজ শেষ হলে ৭ জানুয়ারি ভারতীয় সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা সেতুটি পরিদর্শন করে দ্রুত উদ্বোধন করা হবে স্থলবন্দরটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রানজিট নিয়ে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহারকারীরা ব্যবসায়িক কাজে অর্থ ও সময় সাশ্রয় করতে পারবে। ভারত এ বন্দর ব্যবহার করলে নানা সুবিধা পাবে আমাদের দেশের মানুষ। রামগড় স্থলবন্দর দিয়েই ভারতে যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া দুই দেশের পর্যটন খাতও বিকশিত হবে।