বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
যশোর: জেনেশুনে অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে যশোরের অর্ধশত কলেজ। এসব অধ্যক্ষের সকল প্রকার কাজও অবৈধ। ফলে, অবসরে যাওয়ার পর তাদের করে যাওয়া কাজ নিয়ে কলেজে জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমন অবস্থার পরও কেবলমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে গভর্নিংবডির সভাপতিদের ভুল বুঝিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন মেয়াদোত্তীর্ণ অধ্যক্ষরা।
যশোর শিক্ষাবোর্ড থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, জেলায় ১১২ টি কলেজ রয়েছে। স্কুল অ্যান্ড কলেজ রয়েছে ১৫ টি। একাধিক কলেজ শিক্ষক জানিয়েছেন, জেলায় কমপক্ষে অর্ধশত কলেজ চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৯ জুন এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/ ইনস্টিটিউটসমূহে এক বছর বা এর অধিক সময় ধরে যারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের এ দায়িত্ব পালন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকরির শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর পরিপন্থি হওয়ায় উক্ত দায়িত্ব পালনের কোনো সুযোগ নেই।’
বিধি অনুযায়ী, ‘কলেজে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে অধ্যক্ষের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উপাধ্যক্ষ/ জ্যেষ্ঠতম পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে হতে যেকোনো একজনকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে এবং সেইসাথে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ করতে ব্যর্থ হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষরকৃত কাগজপত্র ও কার্যবিবরণী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্বীকৃত অথবা গৃহীত হবে না। এ অবস্থায় যেখানে অধ্যক্ষ নেই সেখানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে ছয় মাসের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করতে হবে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আদেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যশোরের অর্ধশত কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করছেন। এসব অধ্যক্ষ বছরের পর বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও গভর্নিংবডি তেমন কিছু বলে না। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষরা সভাপতিকে ‘ম্যানেজ’ করে টিকে আছেন।
অনুসন্ধানে এমন তিনটি কলেজের চিত্র উঠে এসেছে। এগুলো হচ্ছে, চৌগাছার সলুয়া আদর্শ কলেজ, সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ডিগ্রি কলেজ ও উপশহর মহিলা কলেজ।
সলুয়া আদর্শ কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিন্ধুভূষণ মন্ডল। তিনি জীববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক। যদিও এই কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিএসসি অনুমোদিত নেই। সিন্ধুভূষণ মন্ডল ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। তারপরও গত এক বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ ছাড়ছেন না। ফলে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তার সকল কার্যক্রম অবৈধ হবে।
মুক্তিযোদ্ধা কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রয়েছেন ডক্টর গৌরচন্দ্র মিস্ত্রি। তিনিও এক বছরের বেশি সময় এই পদে রয়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানাগেছে। উপশহর মহিলা কলেজও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। এই কলেজে রয়েছেন নজরুল ইসলাম। তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে এক বছর পার করেছেন।
অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থেকে তারা কেবলমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ দেখছেন, আর ক্ষতিগ্রস্ত করছেন কলেজকে। তারা এ পদ থেকে চলে যাওয়ার পর তাদের পূর্বের কার্যক্রম যখন অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে তখন তার দায়দায়িত্ব কলেজকে বহন করতে হবে। একইসাথে সেই সময় যেসব শিক্ষক থাকবেন তাদেরও নানা কারণে হয়রানি হওয়া লাগতে পারে। এসব কারণে ওইসব কলেজের শিক্ষকরা এখনই বিধি অনুযায়ী কাজ করার তাগিদ দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি যশোরের সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে ভালো। কারণ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কমান্ড বেশিরভাগ শিক্ষকরা মানতে চান না। এ কারণে যথাযথভাবে শৃঙ্খলা থাকে না। ফলে, নিয়মিত অধ্যক্ষ থাকলে কলেজের জন্য মঙ্গল।