বিজনেসটুডে ২৪ প্রতিনিধি চট্টগ্রাম: পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ মানেই মিষ্টি বিতরণের ধুম। কয়েক বছর আগেও ফল প্রকাশের পর আত্বীয়-স্বজন, শিক্ষকদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হতো। উৎসব আনন্দ ছাড়াও পরীক্ষার ফল প্রকাশের জন্য অপেক্ষায় থাকতো দোকানিরা। সেজন্য ক্রেতার আগমনে জমে উঠত মিষ্টিপাড়া। বিক্রি হতো ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার মিষ্টি। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষার্থীদের অটোপাস কেড়ে নিয়েছে চিরচেনা এ দৃশ্য। দেখা যায়নি মিষ্টি কেনার সেই চিরচায়িত দৃশ্য। দোকানগুলো ছিল ফাঁকা। অটোপাসের কারণে এবার মিষ্টি বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর নগরের বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টির দোকান ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতি ও অটোপাসের কারণে দোকানগুলোতে অন্যান্য সময়ের চেয়ে কমে গেছে বেচা-বিক্রি। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এর আগে যেকোনো পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পরপরই ক্রেতার ভিড় লেগে যেতো মিষ্টির দোকানে। সকাল ১১টার পরপরই চলতো টানা বেচা-বিক্রি। এসময়ে দোকানে অতিরিক্তি কর্মচারী রাখা হতো মিষ্টি বিক্রির জন্য। তবে এবার মোটেই বেচা-বিক্রি নেই দোকানগুলোতে। বন্দরটিলার ফুলকলির ম্যানেজার রিয়াজ আহমেদ বলেন, হরেক রকমের মিষ্টি ভর্তি প্যাকেট বানাতে গিয়ে প্রতি বছর এই সময় অন্তত ৭-৮ দিন আগে থেকে হিমশিম খেতে হতো। কম করে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্ডার আসে। কেউ একশ প্যাকেট, আবার কেউ দুইশ প্যাকেটেরও অর্ডার দিতেন। এবার সেখানে একটিও অর্ডার আসেনি। ফুলেল মিষ্টির দোকানের মালিক স্বপন দাশ বলেন, গত বছরও দুই থেকে তিন হাজার মিষ্টির প্যাকেট বানিয়েছিলাম। এবার সেখানে অর্ডারের সংখ্যা শূণ্য। অন্যান্য বছরে এসএসসি রেজাল্ট উপলক্ষে দোকানে লাইন লেগে থাকতো। কয়েক দিনের জন্য অতিরিক্ত কর্মচারী নিতাম। মিষ্টিভান্ডার ইপিজেড ব্রাঞ্চ ম্যানেজার আবদুল মান্নান বলেন, প্রতি বছরই প্রায় দু’-তিন হাজার প্যাকেটের অর্ডার আসতো। ক্রেতারা অনেক আগেই অর্ডার দিয়ে রাখতো। কিন্তু এবার সব বাতিল হয়ে গিয়েছে। ফুড হার্ট মিষ্টির দোকানের কর্ণধার সাইদুর রহমান বলেন, এবছর আমরা বড় কোনও বিক্রির আশা রাখছি না কারণ সবাই পাস করেছে। এ বছর কেউ খোঁজ-খবরও নেয়নি। খুব বেশি হলে ৫ শতাংশ বিক্রি হলেও হতে পারে এবছর। অন্যদিকে এবছর পাশের দিক থেকে এগিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগ। ভালো ফলাফলের পরও দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছাস-আনন্দ। ছিলনা শিক্ষার্থীদের ভিকটরি (ভি) চিহ্নের প্রকাশ, দলবেঁধে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়ার দৃশ্য। ঘোষিত ফলাফলও আনতে বের হননি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। ঘরে বসেই হাতে পেয়েছেন ফলাফল। শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কার বাবা জলিল বলেন, দুর্যোগের এই সময়ে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ফলাফল পেয়েছে। তাতেই আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। তাছাড়া এমন আনন্দের দিনে শিক্ষক, প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের মিষ্টিমুখ করানো এটাই স্বাভাবিক। তবে অটোপাস করায় সবার মধ্যে সেই আনন্দ টুকুও নেই। মহামারীকালে পরীক্ষা ছাড়াই আগের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে সবাইকে পাস করানো হয়েছে; জিপিএ-৫ পেয়েছে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশে আইন সংশোধনের পর শনিবার একযোগে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, যাতে পৌনে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটে। |