তিনি বলেন, এ কারণে দলটির সমস্ত চিন্তাভাবনা সর্বদা দেশ এবং এর জনগণকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড -১৯ মহামারীর দুটি তরঙ্গের পরে, এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব আরেকটি কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। তাই, আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে এবং সে জন্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা উচিত নয় বরং আমরা যে যা করতে পারি তা উৎপাদন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সোমবার সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানিয়েছেন।
সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সরকার প্রধান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত তার জমি থেকে কিছু না কিছু উৎপাদন করা যা শুধু তাদের চাহিদা মেটাবে না, দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হতেও সাহায্য করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব সংকটের কারণে দেশ যাতে কোনো সংকটের সম্মুখীন না হয় সে জন্য আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বার্তা প্রচারে আহ্বান জানান যে, ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের বিগত তিন বছরের কাজের ওপর একটি বিবরণ উপস্থাপন করেন।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সারা বিশ্বে ঘটেছে এবং বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যা করতে পারি, আমাদের জনগণকে এক ইঞ্চি আবাদযোগ্য ফেলে না রখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এর মানে আমাদের সর্বদা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, তিনি কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে বিশ্ব খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে পারে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন। তার আশংকা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এ কারণেই সেই সময় থেকে আমি মানুষকে তাদের আবাদযোগ্য জমির প্রতিটি ইঞ্চি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেছি।
তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের জন্য সমস্যা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা পণ্য। এ প্রসঙ্গে তিনি এলএনজি ও জ্বালানি তেলের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এসবের দাম বৃদ্ধির ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং বিষয়টি সম্পর্কে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের জীবন-জীবিকা নিরাপদ করতে আমাদের এখনই এর বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে।’
তিনি কর্মকর্তাদের যুদ্ধের পরে অজানা ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়ার জন্য করোনভাইরাস মহামারী সময়ের মতো সতর্কতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের পর অনেক সমস্যা হবে, তা এড়াতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের (বিদেশী) রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে হবে এবং আমাদের অন্যান্য বিষয়ের ওপর নির্ভরশিলতা বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামের উন্নয়ন করতে হবে এবং সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে যাতে মানুষ গ্রামে বসেই তাদের জীবন-জীবিকা চালাতে পারে।
তিনি দেশের যুবসমাজকে উৎসাহী করার ওপর জোর দেন যাতে তারা আত্মকর্মসংস্থানে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারে।
তিনি বলেন, তাদের সৃজনশীলতা এবং প্রতিভাকে ব্যবহার করে তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ক্ষমতায় থাকা ও দেশ পরিচালনার বিষয়টিকে একটি ‘সুযোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, আমার সব সময়ের লক্ষ্য দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। দেশের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে। এর মাধ্যমে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় তিনি তার দেওয়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর উল্লেখ করে বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি এখন উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সময়ের সঙ্গে এই রূপরেখা যুগোপযোগীকরণের মাধ্যমেই বাংলাদেশ আগামীতে এগিয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করতে অনেক সাহায্য করবে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য যেমন বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে তেমনি কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবন্ধকতাগুলো মোকাবেলা করতে এবং দূর করতে নিয়মিত বৈঠক করছি। একাংশের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, তিনি পত্রপত্রিকার লেখালেখি পড়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন না, এটাই বাস্তবতা। কারণ তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাচ্ছে, এ রকম একটা কথা রটাচ্ছে। আমরা উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা নিচ্ছি এটা ঠিক। কিন্তু সবসময় আমাদের একটা হিসেব থাকে। আমরা কিন্তু ডিফল্টার না। আমরা যেখান থেকে যত ঋণ নিয়েছি প্রত্যেকটা ঋণ আমরা কিন্তু সময় মতো পরিশোধ করেছি। আমরা কিন্তু যত রকম দুর্দশা হোক, এমনকি করোনার মাঝেও আমরা কিন্তু ঋণখেলাপি হইনি।
দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, অপজিশন বলতে দুটো পার্টি আছে। দুটোই একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে গড়া। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান নেই।
তিনি বলেন, ‘কাজেই তাদের ঠিক মাটি ও মানুষের সাথে যে সম্পর্ক থাকে, সেই সম্পর্কটা তাদের মাঝে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। সেই ক্ষেত্রে আসলে অপজিশন তাহলে কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্বে দেখলে আপনারা দেখবেন সেখানে কিন্তু মাত্র দুই দল হয়ে গেছে এখন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নাই।
তিনি বলেন, ‘আবার নির্বাচনে আমি তো জানি আমেরিকার প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে।’
বিগত বিএনপি-জামায়াত আমলের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘পেছনে থেকে তাদের উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পারে, যেটা ২০০১ সালে এনেছিল। কিন্তু তার পরিণতি কী ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫শ’ জায়গায় একদিনে বোমা হামলা, অপজিশনে থাকা আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা।’
তিনি বলেন, এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেই সময় সারা দেশজুড়ে ঘটেছিল যার জন্য ইমার্জেন্সি এলো, এটা হলো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাটা যদি মানুষকে ঘিরে হয়, মানুষের কল্যাণমুখী হয়, সেই রাজনীতি কিন্তু টিকে থাকে, সেটাই চলে।
শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা সেই ১৯৪৯ সালে তৈরি। বিরোধী দল থেকে একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এই দলটা গড়ে তোলা। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসলে এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। কারণ মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই এই সংগঠনটা তৈরি। কাজেই আমাদের চিন্তা চেতনাটা ওখানেই থাকে।