Home কলকাতা ওয়াকফবিরোধী বিক্ষোভে জ্বলছে মুর্শিদাবাদ, ৩ জনের মৃত্যু

ওয়াকফবিরোধী বিক্ষোভে জ্বলছে মুর্শিদাবাদ, ৩ জনের মৃত্যু

বিজনসটুডে২৪ ডেস্ক: ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে মুর্শিদাবাদে মৃত্যু হল ৩ জনের। সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়েছিল জঙ্গিপুর। সেখানে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল ছোঁড়ার পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের গাড়ি।

একই ইস্যুতে গতকাল উত্তপ্ত হয় মুর্শিদাবাদের সুতির সাজুর মোড় এলাকা। জঙ্গিপুরের ঘটনার পর ১৬৩ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদে নামে স্থানীয়রা। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন। অবরোধ হঠাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ঢিল পাটকেল ছোড়ার পাশাপাশি ব্যাপক বোমাবাজি করা হয় বলে অভিযোগ।

পালটা লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আশায় তলব করা হয় আধাসেনা। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে বিএসএফ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসএফ গুলি চালায় বলেও অভিযোগ। গুলিবিদ্ধ হয় এক কিশোর। পরে সেই গুলিবিদ্ধ কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর।

শুক্রবারের পর শনিবার ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয় সামসেরগঞ্জে। সেখানে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। সম্পর্কে তাঁরা বাবা ও ছেলে।

পুলিশ জানিয়েছে মৃতদের নাম হরগোবিন্দ দাস(৭৪) ও চন্দন দাস(৪০)। গন্ডগোল চলার সময় সামসেরগঞ্জে হরগোবিন্দ দাসের বাড়িতে ঢুকে পড়ে কয়েকজন দুষ্কৃতী। পরে ঘর থেকে বাবা-ছেলের রক্তাক্ত দেহ মেলে। এখনও পর্যন্ত ওয়াকফ সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনে প্রাণ গেল ৩ জনের। আহত বহু।

ওয়াকফ আইনের বিরোধীতায় উত্তাল মুর্শিদাবাদ । এই পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী  মোতায়েন করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট । রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিগর্ভ পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার সেই মামলার শুনানিতেই মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ। তবে রাজ্যের অন্য জায়গায় অশান্তি হলে সেখানেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

ওয়াকফ আইন বিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে মুর্শিদাবাদ যেভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, সেই নিয়ে আজ শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্ররোচনায় পা না দিতে আর্জি জানান। কেন্দ্রের আইন এ রাজ্যে প্রযোজ্য হবে না, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলে সেখানে বলতে হবে বলে জানান তিনি। এর পাল্টা মমতাকে কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অরাজকতার দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি।

মুর্শিদাবাদ, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতার কিছু অংশে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আবেদন জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়ে রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর থেকেও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। আমাদের আধিকারিকরা দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন।’ এরপরই বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হলে অসুবিধা কোথায়? রাজ্যের ক্ষমতায় তারা (কেন্দ্রীয় বাহিনী) হস্তক্ষেপ করবে না। শুধুমাত্র পুলিশকে সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আমরা সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে চাই। অতীতে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস সহ একাধিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছিল।’ এরপর রাজ্যকে নিজেদের বক্তব্য পেশ করার জন্য ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়।

এরপর ৩০ মিনিট পরে শুনানির দ্বিতীয়ার্ধে রাজ্যের তরফে আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভিডিও কলে যোগ দেন। তিনি বলেন, ‘৬ কোম্পানি বিএসএফ এবং এক হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছেন। আইজি, ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিকরা এলাকায় আছেন। ডিজিপি রাজীব কুমার যাচ্ছেন ঘটনাস্থলে। শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি নেতাদের করা অভিযোগ অস্পষ্ট। এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলা। তবে আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিলে আমাদের আপত্তি নেই।’

দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের তরফে বলা হয়, ‘এমন অশান্তির ঘটনায় আদালত চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না। অপরাধীদের শনাক্ত করে পদক্ষেপ করতে হবে। মুর্শিদাবাদে শান্তি, সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনাই এখন আদালতের মূল বিচার্য বিষয়।’