Home Second Lead কক্সবাজারে বনভূমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি বাতিল দাবি

কক্সবাজারে বনভূমিতে প্রশিক্ষণ একাডেমি বাতিল দাবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: কক্সবাজারের জঙ্গল খুনিয়াপালং সংরক্ষিত বনে আবাসিক প্রশিক্ষণ একাডেমি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সরকার ইতিমধ্যে সংরক্ষিত বনের ২০ একর জায়গা ডি-রিজার্ভ করে বাফুফেকে বরাদ্দ দিয়েছে। তবে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, রোহিঙ্গাসহ নানা অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে কক্সবাজারের পরিবেশ হুমকির মুখে। তা ছাড়া  মহা বিপদাপন্ন এশিয়ান হাতির আবাসভূমি এটি। এ বনে হরিণ, বন্য শূকর, বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও পাখি রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশে আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) এর ২০২১ সালের এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলার মোট বনভূমির পরিমাণ ২ লাখ ৬০ হাজার ৪৬ একর। যার মধ্যে অবৈধ দখলে যাওয়া বনভূমি ৪৫ হাজার ৯৯০ একর। ৪৩ হাজার ৫৬৮ অবৈধ দখলদার ও ৬৯৬ প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে এ বনভূমি দখল করেছে।  পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য উজাড় হওয়া বনভূমি ৬ হাজার ১৪৬ একর। এ ছাড়া সরকার কর্তৃক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বরাবর বরাদ্দকৃত বনভূমি ১৪ হাজার ৩৭২ একর।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ১১ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন ও পরিবেশ রক্ষা সরকারের একটি পবিত্র দায়িত্ব। সরকারের সিদ্ধান্ত যেন জনস্বার্থে হয়। সরকার যখন যেনতেন ভাবে বন বরাদ্দ করে, সেটি  আইনের  লঙ্ঘন। সরকার যখন আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে তখন মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায়। এমন তো না যে, কক্সবাজার ছাড়া আর কোনো জায়গায় সরকারি জমি নেই। ফুটবলের যে মৌলিক নীতি ফেয়ার প্লে সেটিও তো বাফুফে লঙ্ঘন করছে। বাফুফে ফিফার দোহাই দিচ্ছে। ফিফা তো পরিবেশ ধ্বংস করে সেন্টার নির্মাণের নির্দেশ দেয়নি। বলতে চাই, বাফুফের সেন্টার নির্মাণের অনুমোদনের পর ফিফার অর্থায়ন বন্ধের মতো বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা তারা মাথায় রাখবে। আমরা সেটি মনে রাখার কথা বলব।

সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক আন্দোলন নেতা ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বনকে টিকিয়ে রাখাই বড় উন্নয়ন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশেষ করে মরুভূমিতে একটি গাছের পেছনে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সেসব গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হয়। কোনো কারণে একটি গাছ মারা গেলে অসংখ্য লোককে বিচারের আওতায় আনা হয়। অন্যদিকে আমাদের দেশে অঢেল গাছ রয়েছে। এসব নির্বিচারে ধ্বংস করা হলো আমাদের কাজ।

তিনি বলেন, পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো রাজধানী নেই যেখানে ৫টি নদী আছে। ঢাকায় আছে। এ ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থাকেন। তবু নদীগুলোকে আমরা পরিশোধন করতে পারছি না। আমরা দুর্ভাগা যে আমরা বনভূমি তথা এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারিনি। কক্সবাজারের বায়ুদূষণ অন্যান্য সব জায়গার চেয়ে বর্তমানে বেশি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজারের বনটা হলো একটা প্রাকৃতিক বন। আপনি সেটি ধ্বংস করলে আর তৈরি করতে পারবেন না। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আপনি কী রেখে যাচ্ছেন? ইতিমধ্যেই দেখা গেছে, অন্যান্য জেলার তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা এর আশপাশের জেলাগুলোর তুলনায় দুই ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র সবুজ না থাকার কারণে। আমরা এমনিতেও ২৫ শতাংশ বনভূমির যে মৌলিক শর্ত তার ধারেকাছেও নেই।

সভাপতির বক্তব্যে সমাজকর্মী খুশী কবির বলেন, কক্সবাজারের বনভূমির সঙ্গে শুধু গাছপালা নয়, অন্যান্য বন্যপ্রাণী, বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণের মতো বিষয়গুলো জড়িত। আমরাও ফুটবলের উন্নয়ন চাই। তবে সেটা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করে নয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, আসকের প্রধান নির্বাহী গোলাম মনোয়ার, এএলআরডির উপপ্রধান নির্বাহী রওশন জাহান মনি, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এসএম রেজাউল করিম, ইয়েস এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহীম খলিল মামুন, কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সেইভ দ্য কক্সবাজারের সভাপতি আনছার হোসেন প্রমুখ।