Home কক্সবাজার কক্সবাজারে আবারও পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ

কক্সবাজারে আবারও পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ

এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার থেকে:টানা ছুটিতে সমুদ্র শহর কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা প্রকৃতি সৌন্দর্য উপভোগে সন্তোষ প্রকাশ করলে সবখানে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন। অধিকাংশ পর্যটকের অভিযোগ, “পর্যটকের ভীড়ে যে যেমন পাচ্ছে অতিরিক্ত নিচ্ছে। জেলা প্রশাসনও বলছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সাগরতীর জুড়ে দেখা যায় মানুষ আর মানুষ। তীব্র গরম উপেক্ষা করে এসব মানুষের বেশিভাগ শরীর ভাসিয়ে দিচ্ছে নোনাজলের ঢেউতে। সাগর কিছুটা শীতল আর ঢেউয়ের তীব্রতাও কম। তাই ঢেউয়ে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা ইপশিতা ইয়াছমিন নামের এক পর্যটকের সাথে। তিনি বলেন, প্রচন্ড গরম। তারপরও টানা ছুটিতে কক্সবাজার আসলাম বাচ্চাদের নিয়ে একটু ঘুরে বেড়ানোর জন্য। খুব ভালো লাগছে। সমুদ্র যেন মন ও মনন জুড়িয়ে যাচ্ছে।

আরেক পর্যটক ফরিদা বেগম পরিবার-পরিজন নিয়ে কক্সবাজারে খুব আনন্দ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, এই আনন্দ আরও বেশি উপভোগ করা যেত যদি হয়রানীর শিকার হতে না হতো। এখানে যান বাহন থেকে শুরু করে সবখানে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে।

ঢাকা থেকে আগত পর্যটক রিফাত বলেন, গত ৪ দিন আগে বান্দরবান থাকাকালিন কক্সবাজারের ২৫টা হোটেল অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য দেখেছি কিন্তু কোন হোটেলই পায়নি। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার হিলটন রুম পেয়েছি, তবে এক রুম এক রাতের জন্য ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু এর আগে এই হোটেলে অনেকবার রাত্রিযাপন করেছি মাত্র ২ হাজার টাকা ভাড়ায়। টানা ছুটিতে মানুষ বেশি এসেছে তাই হোটেল কর্তৃপক্ষ এভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

হোটেল হিলটনের ম্যানেজার ঊর্মি বড়ুয়া জানান, তাদের কক্ষ ভাড়া সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা। এর বেশি নেয়া হয় না। বেশি বললে এটা অপপ্রচার।

আরেক পর্যটক তৌহিদ বলেন, টানা ছুটি কিংবা কোন উৎসব হলেও কক্সবাজারের হোটেল, রিসোর্ট বা গেস্ট হাউসগুলো কয়েকগুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তার সঙ্গে রেস্তোরা থেকে শুরু বার্মিজ পণ্যের দোকান ও যানবাহনের চালকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে মেতে উঠে। আবার খারাপ ব্যবহার করতেও ভুলে না। তবে এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেয়া দরকার।

হোটেল অভিসার নামের একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ করেছেন তৌহিদুল ইসলাম নামের এক পর্যটক। তিনি জানান, যেখানে তারকা মানের হোটেলের ভাড়া ৫ হাজার যেখানে সাড়ে ৮ হাজার টাকা নেয়া অত্যন্ত খারাপ। তার সাথে একদিনের জন্য রুম ভাড়া দিতে রাজী নন, দুই দিনের জন্য ভাড়া নিতে হবে।

যদিও হোটেলটির এক্সিকিউটিভ জসিম উদ্দিন জানান, একটি কক্ষের একদাম ৬ হাজার টাকা। এর কম বেশি হবে না। তার চেয়েও বেশি নেয়ার ব্যাপারে কথা বলতে রাজী নন তিনি।

আরো কয়েকজন পর্যটকের দেয়া তথ্য মতে, কক্স টুডে, স্বপ্নালয় রিসোর্ট, ফিশ ওয়ার্ল্ডে নামের এ্যাকুরিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দেয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে ৫’শ ২৬টি হোটেল মোটেল রিসোর্ট গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন রাত্রিযাপন করতে পারে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো পর্যটক। কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল ছাড়া অন্য কোন আবাসিক হোটেল ভ্যাট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকার বেশি ভাড়া নেয়ার কোন তথ্য উল্লেখ্য করেন না।

যদি কক্সবাজারের শুল্ক বিভাগের (ভ্যাট) সুপার মুজিবুর রহমানের কাছে ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেলে সমুহের কক্ষ ভাড়া কত উল্লেখ্য করা হয় তার তথ্য চাওয়া হলেও তিনি তা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না বলে জানিয়েছেন।

হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তাদের কাছেও রয়েছে। বিষয়টি খুব অন্যায়। এব্যাপারে সমিতি ও প্রশাসন যৌথভাবে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, টানা ৪-৫ দিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। তাই এই ছুটিকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে। সুনির্দিষ্টভাবে সংখ্যা না জানলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি কক্সবাজারে লাখো পর্যটক অবস্থান করছে।

মো. মাসুম বিল্লাহ আরও বলেন, হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জেলা প্রশাসনের কাছেও এসেছে। এব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত কোন ভাড়া নেয়া হচ্ছে না, তবে ছাড় কম দেয়া হচ্ছে এই ধরণের একটি ব্যাখ্যা দেয়া দিয়েছেন তারা। তবে এব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে দেয়া হচ্ছে, যদি সুনির্দিষ্ট ভাড়ার বাইরে কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি-মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।