করোনাভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেন’ খুঁজে পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। আরও বেশি ছোঁয়াচে। ছড়িয়েও পড়ছে দ্রুত। এমনটাই দাবি করেছেন সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেলি মাখিজে। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেন আক্ষরিক অর্থেই ‘সুপার স্প্রেডার’ । নতুন স্ট্রেনের জন্যই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে অচিরেই।
ইউরোপ, আমেরিকা, মালয়েশিয়াতেও করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছিল আগেই। ভারতেও পাওয়া গেছে ভাইরাসের সংক্রামক স্ট্রেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, সার্স-কভ-২ ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়ান্টের নাম ‘৫০১.ভি২’ । খুব দ্রুত বিভাজিত হওয়ার ক্ষমতা আছে এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেনের। জিনগত বদল বা জেনেটিক মিউটেশনের কারণে এই নয়া স্ট্রেন অনেক বেশি ছোঁয়াচে। তাই বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কা আসতে পারে দেশে।
দেশের করোনাভাইরাস কম্যান্ড কাউন্সিলের প্রধান, গবেষক সালিম আবদুল করিম বলেছেন, করোনার যে স্ট্রেন প্রথম মিলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় তার থেকে নতুনটি অনেকটাই আলাদা। মনে করা হচ্ছে, ভাইরাসের জিনের গঠন বিন্যাস বদলের কারণে এই নতুন স্ট্রেন ছড়িয়েছে। করোনার রিইনফেকশন বা পুণঃসংক্রমণও ঘটাতে পারে এই নতুন ভাইরাল স্ট্রেন। তবে কয়েকটি বায়োমেডিক্যাল জার্নালে দাবি করা হয়েছে, এই নয়া স্ট্রেন প্রতিষেধকের কার্যকারিতায় প্রভাব নাও ফেলতে পারে।
সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেন প্রায় পাঁচ হাজার জিনোম সিকুয়েন্স করা হয়েছে। তাতেই দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি স্ট্রেন একে অপরের থেকে আলাদা। এত দ্রুত জিনের গঠন বিন্যাস বদলে ফেলতে পারে করোনা যে প্রতিটি ভাইরাল স্ট্রেন মানুষের শরীরে ঢুকে প্রতিলিপি তৈরি করার উপায় খুঁজে নিতে পারে। এই ঘন ঘন বদলের জন্য তাদের রিসেপটর বাইন্ডিং ডোমেন অর্থাৎ যে অংশকে কাজে লাগিয়ে তারা মানুষের দেহকোষে ঢুকতে পারে, তারও পরিবর্তন হয়ে যায়। এই কারণেই মানুষের নানা অঙ্গের কোষে ঢোকার রাস্তা খুঁজে নিতে পারে করোনা।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, করোনার পাঁচ জিন শণাক্ত করা গেছে যা সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দায়ী। এই জিনগুলো হল–IFNAR2, TYK2, OAS1, DPP9 এবং CCR2। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সিঙ্গল মিউটেশন হচ্ছে জিনের গঠনে। অর্থাৎ জিন বা ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)-এর যে সম্পূর্ণ বিন্যাস সেখানে একটা নির্দিষ্ট অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোডে বদল হচ্ছে। সার্স-কভ-২ ভাইরাস এমনভাবে সেই অ্যামাইনো অ্যাসিডের কোড বদলে দিচ্ছে যাতে তার বিভাজন (Replication) আর দ্রুতগতিতে হয়। আর বিভাজনের ফলে তৈরি নতুন স্ট্রেন আরও বেশি সংক্রামক হয়ে ওঠে এবং অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক