বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
করোনা লক্ষন নিয়ে ঢাকায় ভর্তি হওয়া ৫ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তবে, তাদের সবার অবস্থা ভাল বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। মঙ্গলবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সন্দেহভাজন পাঁচ রোগীকে বিচ্ছিন্ন রাখার কথা জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
করোনা আতঙ্কে কাঁপছে গোটা দুনিয়া। চীনসহ ৮০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।তবে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার যে পরিসংখ্যান তাতে দেখা যায়, এ সময়ে চীন ছাড়া আর কোথাও মৃত্যু সংবাদ নেই। ৩৮ জন মারা গেছে সেখানে। তাদের ৩৭ জন হুবেইতে। এসময়ে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৬৪ জন। তাদের মধ্যে চীনে ১১৯ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৪২ জন এবং কানায় ৩ জন। আর কোথাও নতুন করে আক্রান্ত হয়নি।
পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাণহানির হার ৬ শতাংশ। ৯৪ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে ওঠছেন।এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৯৩,১৫৪ জন। প্রাণহানি ৩২০২ জন।
ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে ডা. ফ্লোরা
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট চালু করেছে আইইডিসিআর। সেখানে সন্দেহভাজন রোগীকে আলাদা রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ডা. ফ্লোরা বলেন, ‘অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আমাদের হাসপাতালে সব সময়ই আইসোলেশন থাকে। যখনই আমরা রোগী সন্দেহ করি বা যখনই আমাদের কাছে ফোন কল আসে যে তার মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ আছে, আমরা বিলম্ব না করে তাকে আগে হাসপাতালে পাঠাই। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার পর তাদের ছাড়ি। জরুরি প্রয়োজনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় আইসোলেশন ইউনিট চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
তবে বিদেশি নাগরিকদের অযথা হয়রানি না করার পরামর্শ দিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, বিদেশি নাগরিক মানেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমন নয়। দেশে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে কারো শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে তিনটি নমুনা।
ঢাকায় আসা অতিথিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে হোটেলগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোরিয়া, জাপান ও ইরানে কভিড-১৯ রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় এই তিন দেশ বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ উল্লেখ করে আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের দেশের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী সেখানে পড়াশোনা করে, কর্মীরা কাজ করেন। এছাড়া ব্যাবসায়িক সংযোগও রয়েছে। এ কারণে সেসব দেশ থেকে যাত্রীরা এলে আমরা অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিত্সাধীন আরো এক বাংলাদেশি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। এ নিয়ে সেখানে মোট তিন বাংলাদেশি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। আক্রান্ত পাঁচ জনের মধ্যে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন দুই জন। তাদের অবস্থাও স্থিতিশীল। যে কোনো সময় তারাও হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাবেন।
করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বিড়াল
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে প্রকাশ্যে এল এক অবাক করা ঘটনা। চেন্নাইতে একটি বিড়াল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে পাঠানো হচ্ছে চিনে। অন্যদিকে পিপলস ফর এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিমালস (পিইটিএ) এই বিড়ালটির মুক্তির দাবি করেছে।
প্রকৃতপক্ষে ২০ দিন আগে চিন থেকে একটি কন্টেনার বাক্স করে এই বিড়ালটিকে চেন্নাই আসে বলে দাবি উঠেছে। তখন থেকে বিড়ালটি ওই বন্দরেই ছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা আতঙ্কের কারণে ফের ফেরৎ পাঠানো হবে ওই বিড়ালটিকে। তবে চিপ্রকৃতপক্ষে ২০ দিন আগে চিন থেকে একটি কন্টেনার বাক্স করে এই বিড়ালটিকে চেন্নাই আসে বলে দাবি উঠেছে। তখন থেকে বিড়ালটি ওই বন্দরেই ছিল। কিন্তু বর্তমানে করোনা আতঙ্কের কারণে ফের ফেরৎ পাঠানো হবে ওই বিড়ালটিকে। তবে চিনে এই বিড়ালটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনার আশঙ্কা খুবই ক্ষীণ। কারণ, চিনে চামড়া ও মাংসের জন্য বিড়াল মেরে ফেলা হয়।
বিড়ালটিকে ফের চিনে ফেরত পাঠানো হবে জানতে পেরে পিইটিএ (পিপলস ফর এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিমালস)- এর ভারতীয় এক অধিকর্তা রেশমি গোখলে সরাসরি চিঠি লিখেছেন চেন্নাই কর্তৃপক্ষকে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, বিড়ালের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের (COVID-19) এর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই একথা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে প্রতিষ্ঠিত।আমেরিকান ভেটেরিনারি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন তাঁদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, বহু আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পোষ্য ও অন্যান্য পালিত প্রাণীদের থেকে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই।পিইটিএ জানাচ্ছে, জাহাজে করে চিন থেকে একটি বিড়াল ভারতে এসেছে, এটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। ওই সংগঠনের বক্তব্য, চিন থেকে ভারতে আসার এই ১০-২০ দিনের যাত্রায় খাবার ও জল ছাড়া বিড়ালটির বেঁচে থাকা অতি দূরহ এবং অসাধ্য।
পাশাপাশি ওই সংগঠন জানাচ্ছে, চিন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া ওই জাহাজটি সিঙ্গাপুর, কলম্বো সহ একাধিক বন্দর ছুঁয়ে এসেছে। একাধিক জায়গায় জিনিস বিনিময়ের জন্য জাহাজের কন্টেনারগুলি খোলাও হয়েছিল। তাই সেই সব জায়গা থেকেও ওই বিড়ালটি ভুলবশত কোনও কন্টেনারের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে বলে মনে করছে পিপলস ফর এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিমালস নামে ওই সংগঠন। ওই সংস্থা জানিয়েছে, তাঁরা ভারতেই ওই বিড়ালটির জন্য একটি ভালো ও স্থায়ী বাড়ি খুঁজে দিতে পারে।