Home চট্টগ্রাম করোনার অভিঘাতে পুরোনো বইয়ের বাজার

করোনার অভিঘাতে পুরোনো বইয়ের বাজার

শাওন আজহার

চট্টগ্রাম: ১৯৭০ সালে নগরীর স্টেশন রোডের বিপরীতে মহিউদ্দিন মার্কেটে আবুল হোসেনের ‘অমর বইঘর’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে পুরোনো বইয়ের দোকানের সূচনা হয়। বর্তমানে স্টেশন রোড এলাকায় প্রায় ২২টির মতো পুরোনো বইয়ের দোকান রয়েছে। তারমধ্যে জিইসি মোড়ে ১টি ও চকবাজারে প্রায় ১২টি পুরোনো বইয়ের দোকান রয়েছে। একসময় অনেক দুর্লভ বই সুলভ দামে পাওয়া যেত এখানে। অনেক খ্যাতিমান কবি, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে গ্রন্থানুরাগী আমজনতাও নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন এসব বইয়ের। তবে হালে অবস্থা পাল্টেছে। করোনাভাইরাসের কারণে বইয়ের জোগানও যেমন কমেছে, তারচেয়ে বেশি কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। তারপরও আশায় বুক বেঁধে আছেন পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার পালে হাওয়া বইবে পুরোনো বই বিক্রিতে।

‘বই নিকেতন’ এর মালিক আজাদ বলেন, লকডাউনে বইয়ের ব্যবসা একেবারেই ছিল না, আমাদের কাছ থেকে বই কিনে নিয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যারা এখন বেকার টিউশনি নেয় তারা অনলাইনে বিভিন্ন গল্পের বই বিক্রয় করছে।

চট্টগ্রামে ভাড়ায় বই দেওয়ার পদ্ধতি চালু করেছে ‘অমর বইঘর’। ছাত্রদের কথা মাথায় রেখে ২০০৪ সাল থেকে এই পদ্ধতি চালু করা হয়। ছাত্ররা প্রতিটি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই নিয়ে যায় এখান থেকে। এক বছর পর ফেরত দিলে দামের ৩০ শতাংশ কেটে রেখে বাকি টাকা দিয়ে দেওয়া হত। গল্প-উপন্যাসের বইও দেওয়া হত ভাড়ায়।

অমর বইঘরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আবুল হোসেনের প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করেন তাঁর ছেলে মো. শাহজাহান। আবুল হোসেনের জীবনটাও গল্প-উপন্যাসের চরিত্রের মতোই। ১৯৬৮ সালে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় ঢাকার শ্যামবাজারের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে এসেছিলেন। স্টেশন রোডে রিয়াজউদ্দিন বাজারের মুখে ফুটপাতে চট বিছিয়ে শুরু করেন পুরোনো বই বেচা। তখনো এত দালান হয়নি। আশপাশে ঝোপঝাড়। শুরুর দিকে ভাঙারির দোকান থেকে বেছে বেছে বই এনে বিক্রি করতেন।

মোঃ শাহজাহান বলেন, আমাদের পুরোনো বইয়ের ব্যবসা চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম শুরু হয়, ১৯৭০ সাল থেকে। পূর্বে পুরোনো বইয়ের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে আমরা কিছু নতুন পাঠ্যবইও বিক্রয় করি। পুরোনো বই ক্রেতা এবং বিক্রতাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা মূলত বেশি, ঢাকার নীলক্ষেত এবং বায়তুল মোকাররমে সামনে বইয়ের দোকান থেকেও আমরা নতুন-পুরাতন বই ক্রয় করে থাকি । স্টেশন রেডে ২টি দোকান ছাড়াও চকবাজার ও জিইসি মোড়ে আরো ২টি দোকান রয়েছে আমাদের। করোনা পরিস্থিতির কারণে বই বিক্রয় প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এছাড়া অনলাইনভিত্তিক ই-বুক থাকার কারণে গল্প,কবিতা এবং সাহিত্যের বইয়ের বিক্রয়ে কিছুটা প্রভাব পড়েছে, এরপরও বই প্রেমিকরা বই ক্রয় করছেন।

নুপূর মার্কেটে সাগর বই ঘরের মালিক মোঃ আবুল হোসেন বলেন, ১৯৮০ সালের দিকে পুরোনো বইয়ের ব্যবসা শুরু করি। ১ম দিক থেকে পাঠকদের কাছে ব্যাপক সাড়া পাই। কারণ অনেক স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশি দাম দিয়ে নতুন বই ক্রয় করা সম্ভব হয় না। পুরোনো বই আমরা পাঠকদের কাছ থেকেই কমদামে ক্রয় করে থাকি এবং ৩০-৪০ টাকা লাভে বিক্রয় করে থাকি। তাছাড়া গল্প,কবিতা এবং সাহিত্যের পুরোনো বইয়েরও চাহিদা রয়েছে।

বই প্রেমি নাজমুল বলেন, দুর্লভ বইয়ের রত্নভান্ডার এটি। এখান থেকে কিনেছি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। কিনেছি মাত্র পাঁচ হাজার টাকায়।

বিশ্ব বিদ্যালয় শিক্ষার্থী অনিক বলেন, পাঠকের ভিড়, তারপরও কোনো পড়ুয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বই পড়লেও দোকানির কোনো খেদ চোখে পড়েনি অমর বইঘরে। পড়ুয়াদের যেন আলাদা কদর। চট্টগ্রাম শহরের এমন কোনো পড়ুয়া খুঁজে বের করা মুশকিল, যিনি একবারের জন্য এই বইঘরে ঢুঁ মারেননি। কারও দুর্লভ কোনো বইয়ের খোঁজ দরকার, তাহলে অমর বইঘরে যাও-কথাটি বেশ প্রচলিত।

প্র্রতিবেদনের ছবিগুলো তুলেছেন : এম জে আলম