Home Second Lead করোনার কাছে হেরে গেলেন কবরীও

করোনার কাছে হেরে গেলেন কবরীও

ছবি: সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি 


ঢাকা: করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় মারা গেলেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী (৭০বছর) (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে ৮ এপ্রিল দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।

সুভাষ দত্ত পরিচালিত ও অভিনীত সুতরাং ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে নায়িকা কবরীর আবির্ভাব। ১৯৬৪ সালের ২৪ এপ্রিল মুক্তি পায় তার প্রথম ছবি।

 চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্ম মিনা পালের। বাবা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল, মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে পদার্পণ তার। ১৪ বছর বয়সে মিনা পাল নামের এক কিশোরী পেটে গামছা প্যাঁচানো পুঁটলি বেঁধে গর্ভবতী নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন। সেটাই সূচনা কবরীর।

১৯৬৪ সালের ‘সুতরাং’ ছবির পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর দেশের প্রায় সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘হীরামন’ কাজী জহিরের ‘ময়নামতি’ [১৯৬৯], সিরাজুল ইসলামের ‘পারুলের সংসার’ [১৯৬৯], বাবুল চৌধুরীর ‘আগন্তুক’ [১৯৬৯], সুভাষ দত্তের ‘বিনিময়’ [১৯৭০], আমির হোসেনের ‘নীল আকাশের নিচে’ [১৯৭০], আমির হোসেনের ‘যে আগুণে পুড়ি [১৯৭০], বাবুল চৌধুরীর ‘আঁকাবাঁকা’ [১৯৭০], নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘দ্বীপ নেভে নাই’ [১৯৭০], নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘কখগঘঙ’ [১৯৭০], আলমগীর কুমকুমের ‘স্মৃতিটুকু থাক’ [১৯৭১], রুহুল আমিনের ‘নিজেরে হারায়ে খুঁজি’ [১৯৭২], জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ [১৯৭৩], রুহুল আমিনের ‘বেঈমান’ [১৯৭৪], মাসুদ পারভেজের ‘মাসুদ রানা’ [১৯৭৪], মোস্তফা মেহমুদের ‘অবাক পৃথিবী’ [১৯৭৪], প্রমোদকরের ‘সুজনসখী’ [১৯৭৫], অশোক ঘোষ ‘মতিমহল’ [ ১৯৭৭], আবদুলতাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’ [১৯৭৮], কাজী জহিরের ‘বধূবিদায়’ [১৯৭৮], শহিদুল হক খানের ‘কলমীলতা’ [১৯৮১], চাষী নজরুল ইসলামের ‘দেবদাস’ [১৯৮২]। এছাড়া আরও অনেক ছবিতে অভিনয় করেন। তিনি ‘আয়না’ নামের একটি ছবি পরিচালনাও করেছেন। এছাড়াও সম্পতি তিনি শুরু করেছিলেন সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্রের কাজ।

জীবনের অনেক ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে পার করেছেন এই অভিনেত্রী।

চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারের কিশোরী মিনা পালের স্বপ্ন ছিল- ‘বড় হয়ে সাদা শাড়ি পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে মাস্টারি করবেন।’ কিন্তু ‘লাইট, ক্যামেরা-অ্যাকশন-কাটের’ পর ব্যক্তিজীবনে রাজনীতিতে নেমে জীবনের আরেক চলচ্চিত্রের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাকে। রাজনীতি প্রসঙ্গে কবরী বলেছিলেন ‘আমি রাজনীতিতে কখনও অভিনয় করিনি, আবার অভিনয় জীবনেও কখনও রাজনীতিকে স্থান দিইনি। দুটি কাজই করেছি মানুষকে ভালোবেসে আর মানুষের ভালোবাসার জন্য। মানুষের পাশে থাকার জন্য।’ কবরীর এই মন্তব্যই বলে দেয়, কর্মে যতখানি নিপুণ ছিলেন তিনি, ঠিক ততখানি ছিলেন ভালোবাসায়ও।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯ এপ্রিল পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি। সেখান থেকে ভারতে পাড়ি জমান। সেই সময় রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক না থাকলেও একজন শিল্পী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কলকাতা গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্র জগতে মনোনিবেশ করেন কবরী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।