Home Second Lead শ্রীলঙ্কা কি সেনা শাসনের দিকে ?

শ্রীলঙ্কা কি সেনা শাসনের দিকে ?

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট পলাতক। কিন্তু এখনও ক্ষমতা ছাড়েননি। পদত্যাগ করেছে প্রধানমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশ্যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা, দফায় দফায় বৈঠক চলছে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয়। পাশাপাশি সেনার ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে বলেও জল্পনা ছড়িয়ে দ্বীপ রাষ্ট্রে। দেশের অচলাবস্থার সুযোগ নিয়ে সেনার ক্ষমতা দখলের অসংখ্য নজির আছে। অনেকেই মনে করছেন চলতি পরিস্থিতিতে সেনা বাহিনী অন্তত পরবর্তী সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের দায়িত্বভার নিজেদের হাতে নিয়ে নিতে পারে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার কথা পরবর্তী নির্বাচন।

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে গণ বিদ্রোহের মুখে প্রাসাদ ছেড়ে পালান। সরকারিভাবে স্বীকার করা না হলেও মনে করা হচ্ছে নৌসেনার জাহাজ ও বিমানে চাপিয়ে নিরাপদ সেনা ছাউনিতে নিয়ে তোলা হয়েছে। সেনার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। তবে ইতিমধ্যে গোতাবায়ার পক্ষে জানানো হয়েছে, আগামী ১৩ জুলাই বুধবার পদত্যাগ করবেন তিনি।

কলম্বোবাসীর অনেকেউ মনে করছেন, পদত্যাগের ঘোষণার পিছনে গোতাবায়ার অন্য কৌশল আছে। দেশকে সেনা শাসনের দিকে ঠেলে দেওয়া তাঁরই চাল হতে পারে। কারণ, দ্বীপরাষ্ট্রের সেনা বাহিনীর প্রতিটি স্তরে রাজাপক্ষে পরিবারের ঘনিষ্ঠরা রাজ করছে। বিগত ১৭ বছরের মধ্যে ১৩ বছর এই পরিবারের হাতেই ক্ষমতা ছিল। আর প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে গোয়াবায়া ছিলেন সামরিক সচিব।

Image - রাজাপক্ষদের চাল! শ্রীলঙ্কা কি সেনা শাসনের দিকে এগোচ্ছে

বর্তমান সেনা প্রধান সাভেন্দ্রা সিলভা আজ বাহিনীর শীর্ষকর্তাদের পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আশ্বাস দিয়েছেন, স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সেনা তাদের কর্তব্য করবে। শুধু দেশবাসীকে নয়, সেনাপ্রধান বিদেশি দূতাবাসগুলির মাধ্যমে বাকি দূনিয়াকেও বার্তা দিয়েছেন, সেনা বাহিনী সতর্ক আছে। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে দেবে না সেনা।

সাভেন্দ্রা সিলভা বলতে গেলে রাজাপক্ষে পরিবারের লোক। তাঁর বিরুদ্ধে মানবাধিকার হরণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রেসিডেন্টের এতই কাছের মানুষ যে মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্র সিলভার বিরুদ্ধে জাফনায় বসবাসকারী তামিলদের উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগে বিধিনিষেধ আরোপ করা সত্ত্বেও গোতাবায়ে বা তাঁর দাদা মাহিন্দা রাজাপক্ষে সেনা প্রধানকে সরাননি। বাইডেন সরকার আবার মানবাধিকারকে হাতিয়ার করেই দেশে দেশে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে।

কেন মনে করা হচ্ছে, সেনা শাসনের দিকে দেশকে ঠেলে দেওয়া রাজাপক্ষে পরিবারের চাল হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শ্রীলঙ্কায় বিগত কয়েক মাস যাবৎ কার্যত সেনা শাসন চলছে। সাধারণ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অবসরপ্রাপ্ত অথবা কর্মরত সেনা অফিসারদের বসিয়ে দিয়েছেন গোতাবায়া। অনুগত সেনা ক্ষমতায় থাকলে রাজাপক্ষে পরিবার বকলমে কিছুদিন দেশ শাসন করতে পারবে। রক্ষা পাবে তাদের বিশাল সম্পত্তি।

লক্ষণীয় হল, গত কয়েকদিন যাবৎ সেনা খুব একটা মারমুখী হয়নি। যদিও মে মাসেই দেখামাত্র গুলি করার ক্ষমতা সেনাকে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশ-সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাকেও কাজ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ দখলকারীদের সেনা বাধা দেয়নি। কলম্বো অভিমুখে নাগরিক মিছিল আটকাতে সাধারণ প্রশাসন কার্ফু জারি করেছিল। আদালত এবং মানবাধিকার কমিশন তা বাতিল করে দেয়। মনে করা হচ্ছে, এর পিছনে সেনার ভূমিকা আছে। কারণ, শ্রীলঙ্কায় আদালত এবং মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অতীতে বারে বারেই সেনার কথায় চলার অভিযোগ ওঠে। সেনা মনে করলে কার্ফু বলবৎ রেখে বিদ্রোহী জনতাকে দমনের পথে হাঁটতে পারত।

কিন্তু অনেকেই মনে করছেন, এই অস্থিরতা চলতে দেওয়ার পিছনে আছে নাগরিকদের ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ দেওয়াও। এই সুযোগে সেনার পক্ষে ক্ষমতা দখল সহজ। অভ্যন্তরীণ বিবাদ শুরুর পর থেকেই শ্রীলঙ্কা পুলিশ সেনার সঙ্গে কথা বলে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সিদ্ধান্ত করছে। কার্যত রয়েছে যৌথ বাহিনীর হাতে। শ্রীলঙ্কা পুলিশের আইজি সিডি বিক্রমরত্নে আজ দেশবাসীকে বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করুন। শান্তিভঙ্গ করবেন না।

Image - রাজাপক্ষদের চাল! শ্রীলঙ্কা কি সেনা শাসনের দিকে এগোচ্ছে

শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে অপসারণ অত্যন্ত কঠিন। অপসারণের প্রস্তাব প্রথমে সংসদে পাশ করাতে হয়। সংসদ অপসারণের প্রস্তাবে সায় দিয়ে তা সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাবে। সর্বোচ্চ আদালত অপসারণের কারণের সঙ্গে সহমত হলে ফের সেই প্রস্তাব সংসদে পাশ করাতে হয়। শ্রীলঙ্কার সংসদে বর্তমানে শাসক দলের পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আদালতেও গিজ গিজ করছে রাজাপক্ষে পরিবারের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকেরা।

সেনার ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনার কারণ, গোতাবায়ে গোপন ডেরায় বসে আরও কিছুদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারতেন। আবার বিরোধী দলও চলতি পরিস্থিতিতে দেশের ভার নিতে তেমন আগ্রহী নয়। এমন পরিস্থিতিতে সর্বদলীয় সরকার হলেও সেই সরকারকে সেনার কথায় চলতে হবে বলে অনেকের ধারণা। যেমনটা হয়েছে অতীতে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পাকিস্তানে অন্তর্বর্তী ও স্থায়ী, সব সরকারের সময়েই।