এইচ এম হুমায়ুন কবির কলাপাড়া (পটুয়াখালী) থেকে: কলাপাড়া উপজেলায় কৃষকের এ বছর আমন আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রামনাবাদ নদী এলাকার ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। ওই গ্রামের মানুষ এখন অমাবস্যা-পূর্ণিমার সময় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ভাসতে থাকে। মানুষ বাড়িঘর থেকে জোয়ারের সময় নৌকা ছাড়া বের হতে পারে না। কৃষকরা কিভাবে আগামী বছরের ধান সংগ্রহ করবে তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
লালুয়া ইউনিয়নের চরচান্দুপাড়া, মুন্সীপাড়া, বুড়োজালিয়া, চান্দুপাড়ায় এ অবস্থা। কোথাও বেড়িবাঁধ ভেসে গেছে জোয়ারের প্রবল ঝাপটায়। দেবপুর এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। মানুষ এখন বসবাসের জায়গাটুকুও হারিয়ে ফেলছে। হাজার হাজার কৃষকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি পালন বন্ধের উপক্রম হয়েছে।
মৌসুম শেষ হতে চললেও আমনের বীজতলা করতে পারছে না। এমনকি সন্তানদের স্কুল মাদরাসায় যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও বিকল্প বাঁধ করার জন্য জমি পাচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আবার কোথাও পায়রা বন্দর অধিগ্রহণ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পুরনো বেড়িবাঁধ মেরামত করছে না। অনেক অসহায় দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ উপায় না যেখানে বাঁধ রয়েছে, সেখানে বাঁধের চাপে চরম ঝুঁকি নিয়ে ফের ঠাঁই নিয়েছেন।
চরচান্দুপাড়া গ্রামের কাশেম তালুকদার এ বছর আমন আবাদ তো দূরের কথা, বাড়িঘর ছেড়ে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। একই দশা দেলোয়ার চৌধুরী, সুলতান চৌধুরী, খালেক সিকদার, শহীদ হাওলাদারের মতো অনেকের। তারা বাড়িঘর ছেড়ে ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য মর্জিনা বলেন, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙা বাঁধ ও স্লুইসগেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে চর বালিয়াতলি, লেমুপাড়া, আমতলীপাড়া, বড় বালিয়াতলি, দ্বিগর বালিয়াতলিসহ পাঁচ গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভেঙে পড়ে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দেখা দেয় বিশুদ্ধ পনির তীব্র সঙ্কট।
কমিউনিটি বেইজড সংগঠনের (সিবিও) সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নাহারের দাবি: ত্রাণ নয়, চর বালিয়াতলি গ্রামের ভাঙা বাঁধগুলো ভালো করে মেরামত করা হোক। একই সাথে চর বালিয়াতলি ও লেমুপাড়া গ্রামে পানির চাপে ভেঙে পড়া সøুইস গেটগুলো সংস্কার করা হোক। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
লালুয়ার চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, তার ইউনিয়নের রাবনাবাদপাড়ের দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। মানুষের বাড়িঘর সম্পদ সব অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে।
ধানখালী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজ তালুকদার জানান, দেবপুরের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত থাকায় তার ইউনিয়নে এখন তিন গ্রাম জোয়ারের পানিতে ভাসে। এখন আমন আবাদ করলেও ধান পাকার আগে লোনা পানিতে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
চম্পাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, দেবপুরের বাঁধ নেই। প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা দিয়ে ইউনিয়নের অর্ধেক ডুবে যায় জোয়ারের পানিতে। এমনকি অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট পর্যন্ত ভেঙে একাকার হয়ে গেছে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, লালুয়ায় বেড়িবাঁধ করবে পায়রা বন্দর। আর দেবপুরে বেড়িবাঁধ করার জন্য জমি না দেয়ায় করা সম্ভব হচ্ছে না।