খালেদ আহমেদ,সিলেট থেকে: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এবার কাফনের কাপড় পরে রাস্তায়।
শনিবার বেলা ৩টার দিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কাফনের কাপড় পরে মাঠে নামেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, এরকম নির্লজ্জ, বেহায়া ভিসি আমরা চাই না। আন্দোলনরত ২৪জন শিক্ষার্থী মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। তবুও ভিসি পদত্যাগ করছেন না। ভিসির পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙছে না, প্রয়োজনে তারা মরতেও রাজি।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। টানা দশম দিনের মতো তাদের আন্দোলন চলছে। এদিকে গত বুধবার বিকাল থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী বসেছেন আমরণ অনশনে। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে অনশনের ৩ দিনের মাথায় শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত অনশনরতদের মধ্য থেকে ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এর মধ্যে একজন ছাত্রীর অবস্থা খুবই গুরুতর। আর বাকি ৭জনের মধ্যে প্রায় সবার শরীরে স্যালাইন পুশ করতে হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাবিতে থাকা ওসমানী মেডিকেল টিমের সদস্য মো.নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, অনশনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতালে থাকা ১৬ জনের মধ্যে একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ। তাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে মুখ দিয়ে খাবার না খাওয়ালে অবস্থার আরও অবনতি হবে। তাছাড়া সময় যত যাবে এ সংখ্যাটা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছি। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানান, ২৪ জন অনশনে বসলেও বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে একজন বাসায় চলে গেছেন।
১৬ জনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জালালাবাদ রাগিব রাবেয়া হাসপাতাল ও মাউন্ড এডোরা হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে শনিবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমকে জানান, সকালে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তার অবস্থাও অবনতির দিকে। প্রসঙ্গত: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। চারদিন ধরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশন করছেন।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’
পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে দেখা করতে ঢাকায় শিক্ষক প্রতিনিধি দল
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করতে ঢাকা গিয়েছেন পাঁচ শিক্ষকের একটি প্রতিনিধি দল। গতকাল শুক্রবার রাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রতিনিধি দলে আরও আছেন ফিজিক্যাল সায়েন্সের অনুষদ ডিন অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহিবুল আলম, অ্যাপ্লাইড সায়েন্স অনুষদের ডিন ডিন অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম, বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খায়েরুল ইসলাম রুবেল।