- তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: ইউএনও
- বিদ্যালয়ের মাঠ ভাড়া দেওয়ার কোনো বিধান নেই: মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
- স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠ ব্যবহার: ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
- মাঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে ব্যবহার করছে জানিনা: প্রধান শিক্ষক
বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ তথা সদ্য নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী রেখে কাজ করছেন ঠিকাদার। এমনকি মাঠটির পূর্ব পাশে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে একটি বিশাল আকৃতির টিনশেড ঘর। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম কর্তৃক মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে চন্দ্রপুর-জামরিল সড়কের নির্মাণ সামগ্রী ঠিকাদারকে রাখতে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য তিনি মাঠি ভাড়া দেয়ার কথা সরাসরি অস্বীকার করেছেন।
প্রতিবছর এখানে ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করা হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রায় দুই মাসের অধিক সময় ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রাস্তার অদূরে এ খেলার মাঠে পাথরের খোয়া, বালু,পিচের (বিটুমিন) অসংখ্য ড্রাম ইত্যাদি রেখেছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, একদিকে,চন্দ্রপুর-জামরিলডাঙ্গা নির্মাণাধীন সড়কের ঠিকাদার খেলার মাঠে পূর্ব পাশে পাথর ও বালুর বিশাল স্তুপসহ সড়কের বিভিন্ন রকম নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে রেখেছেন। মাঠের একটি বড় অংশজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে পাথর। মাঠজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাথরের কুচি। মাঠের ভেতর রয়েছে ভারী ভারী যন্ত্র। মাঠের মধ্যে ওঠা-নামা করছে পাথরবোঝাই ট্রাক ও ভারী ভারী যন্ত্র। মাঠটির পূর্ব পাশের গোলপোস্টের সামনেই পাথর-বালু মিশ্রণের জন্য প্লান্ট মেশিন বসানো আছে। বিকট শব্দে চলছে সেটি। দক্ষিণ পাশেই মাটি খুঁড়ে পিচ (বিটুমিন) গলানোর চুলা স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ সামগ্রীর ধুলাবালি এবং বিটুমিন গলানোর কাজে ব্যবহৃত টায়ার ও গার্মেন্টস তুলা পোড়ানোর তীব্র কালো ধোঁয়ায় যেন ওই এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
আশপাশের এলাকার ভেতরে ছেলেমেয়েদের একটি মাত্র খেলাধুলার মাঠ হলো শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে। সেটাও ভাড়া দিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। বর্তমানে বিদ্যালয় খোলা রয়েছে কিন্তু খেলার মাঠ বন্ধ থাকায়, শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না।’
স্থানীয় খেলোয়াড় নাঈম মিয়া বলেন,‘পাথর আর বালুর বিশাল সব স্তুপের নিচে চাপা পড়েছে মাঠটি। খেলার মাঠে চলছে নষ্ট করার যজ্ঞ। প্রতিবছর ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলেও মাঠ দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রাখার
কারণে এখন কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা যাচ্ছে না। মাঠটি খেলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ তা দেখার কেউ নেই।’
কালিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও পুরুলিয়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান এসএম হারুনার রশীদ জানান, ‘সম্প্রতি নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে এলাকার যুব সমাজের খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করছি।’ সড়ক নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রাইট কনস্ট্রাকশন ফার্ম লিমিটেডের কর্ণধার রকিবুল হাসান ব্রাইট বলেন,‘কাজ আমাদের নামে হলেও সেটি করছেন কালিয়া পৌরসভার সাবেক এক মেয়র। ভাড়ার বিষয়টি আমার ভালো জানা নেই। আমি যতটুকু জানি স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে মাঠ ব্যবহার করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বালু দিয়ে মেরামত করে দেয়া হবে।’
এ বিষয়ে চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিভাবে ব্যবহার করছেন, সেটি আমার জানা নেই। বিষয়টি সম্পর্কে যখন অবগত হয়েছি; সঙ্গে
সঙ্গেই আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান মিয়া বলেন,‘ এ বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ভাড়া দেওয়ার কোনো বিধান নেই। আর যদি ভাড়া দিয়ে থাকেন, এর সব দায়দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আরিফুল ইসলাম বলেন,‘মাঠটির উত্তর পাশে কালিয়া-নড়াইল প্রধান সড়ক দিয়ে জেলা শহরে যাবার পথে দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠটি দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রাখার বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’