বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জ: জেলার কটিয়াদীতে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের গ্রামের বাড়িতে হামলা হয়েছে। হামলার সময় স্বাস্থ্য সচিব তার বাড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় হামলাকারীরা স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতে অবস্থানরত উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি বা এসি-ল্যান্ড) আশরাফুল আলমকে মারধর করে পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
শনিবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুরে চানপুর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে একদল লোক ওই হামলা চালায়।
স্বাস্থ্য সচিবের পরিবারের দাবি, সচিবের মায়ের নামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে স্থানীয় সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুগতরা ওই হামলা চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) সাংসদ নূর মোহাম্মদের বাড়ি একই গ্রামে। স্বাস্থ্য সচিবের পরিবারের সদস্যদের দেয়া জায়গায় তার মায়ের নামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্লিনিক নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য সচিব। ক্লিনিকটি নির্মাণের বিষয়ে সাংসদকে অবহিত করা হয়নি বলে অভিযোগ তার অনুগতদের।
এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। রবিবার কিশোরগঞ্জে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল পরিদর্শন উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য সচিব গ্রামের বাড়িতে যান। পরে শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশের নির্মাণাধীন ক্লিনিকের কাজ দেখতে যান সচিব। এ সময় ক্লিনিকে যাতায়াতের রাস্তাটি অন্যের জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে ২০ থেকে ২৫ জন লোক গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার দাবি জানায়। এ নিয়ে সচিবের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তারা চলে যায়। এরপর দুপুর একটার দিকে কয়েকটি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসে করে নির্মাণাধীন ক্লিনিকের সামনে শতাধিক লোক যায়। তাদের হাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় তারা সচিবের নাম ধরে ক্লিনিকের সামনে দাঁড়িয়ে গালিগালাজের পাশাপাশি নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলে। সচিব বাড়িতে আসার পর থেকে তার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করছিলেন এসি-ল্যান্ড আশরাফুল আলম।
তিনি বাড়ির বাইরে আসামাত্র তাকে মারধর শুরু করে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে তাকে পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে এলাকার মানুষ তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এরপর হামলাকারীরা ক্লিনিকের নির্মাণশ্রমিকদের মারধর করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতেও হামলা চালায়।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ঘটনাস্থলে যায় র্যাব সদস্যরা। হামলার পর এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেছেন, ‘এসি-ল্যান্ডকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তাকে মারধর করে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলেছে হামলাকারীরা। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমার মায়ের নামে এলাকায় একটি ক্লিনিক করছি। তাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন বাধা দিচ্ছেন।’
সচিবের ছোট ভাই নাসির উদ্দিন বলেছেন, তিনি হামলাকারীদের প্রায় সবাইকেই কমবেশি চিনতে পেরেছেন। হামলাকারীদের বেশিরভাগই স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক। হামলাটি হয়েছে মূলত চানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ মিয়ার নেতৃত্বে।
ঘটনাস্থলে থাকা কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ জলিল গতকাল বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
হামলার শিকার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, ‘ক্লিনিকের নির্মাণকাজের শ্রমিকদের কাজে বাঁধা দিলে আমি প্রতিবাদ করতে যাই। এ সময় তারা (হামলাকারীরা) আমার ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়।’
স্বাস্থ্য সচিবের বাড়িতে তার সমর্থকদের হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ নূর মোহাম্মদ বলেন, আমি এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। জানি শুধু স্বাস্থ্য সচিবের বাড়ির পাশে একটি ক্লিনিক হচ্ছে।
ক্লিনিকের রাস্তার জায়গা অন্য জনের, তা এসি-ল্যান্ড জোর করে ভেকু দিয়ে ভরাট করছেন বলে এলাকার কয়েকজন কিছুদিন আগে অভিযোগ করেছেন বলেও জানান সাংসদ।