বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম: হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। গরম নিয়ন্ত্রণে খামারিরা বৈদ্যুতিক পাখা সংযুক্ত করলেও লাগামহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাতেও কোনও কাজে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ খামারিদের। এ অবস্থায় বড় ধরণের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপ প্রবাহ চলমান রয়েছে যা আগামী তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে। কুড়িগ্রাম সদরের বেলগাছা ইউনিয়নের ব্রয়লার খামারি শাহীনুর জানান, তিনি বর্তমানে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি পালন করছেন। তাপদহের কারণে তার খামারে গত চারদিনে হিটস্ট্রোকে অন্তত ২৫ টিরও বেশি মুরগি মারা গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তার মুরগি বাজারজাত করার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন স্ট্রোকে মৃত্যুর কারণে তিনি বড় ধরণের লোকসানের মুখোমুখি হয়েছেন। ভুক্তভোগী এই খামারি বলেন, ‘গত চারদিন ধরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ টি করে মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে। গরম নিয়ন্ত্রণে ফ্যানের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু বারবার লোড শেডিংয়ের কারণে কোনও কাজ হচ্ছে না। আমি এবার বড় ধরণের লোকসানের মুখে পড়লাম।’ প্রত্যেকটা মুরগি দুই কেজির কাছাকাছি হয়েছে। আরও চার পাঁচদিন পর বাজারজাত করার কথা। কিন্তু প্রতিদিন যে হারে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে তাতে শেষ পর্যন্ত কত লোকসান হবে সে চিন্তা করছি। আমার এলাকার সব খামারে একই অবস্থা দেখা দিয়েছে।’ যোগ করেন এই খামারি।
সদরের হরিশ্বর কালোয়া গ্রামের ব্রয়লার খামারি মেহেদি হাসান বলেন, ‘প্রচন্ড গরমের কারণে হিটস্ট্রোক শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে হিটস্ট্রোকে আমার খামারে ১৫ টি মুরগি মারা গেছে। প্রতিটি মুরগি দুই কেজি ওজনের কাছাকাছি হয়েছে। প্রচন্ড গরমের কারণে কোনও ভাবেই হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যান চালিয়েও কাজ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান কোথায় ঠেকবে বলা মুশকিল।’
খামারিরা বলছেন, শুধু হিটস্ট্রোক নয়, তাপদহের কারণে ব্রয়লার মুরগির পাতলা পায়খানা দেখা দিয়েছে। এতে করে আক্রান্ত মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ছে। নিয়মিত ভ্যাকসিন ও মেডিসিন প্রয়োগ করার পরও এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ মেলেনি।অতিরিক্ত গরমের কারণেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে বলছেন খামারিরা। তবে প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, গরমে হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়লেও এ ধরণের সমস্যা নিয়ে খামারিরা তাদের সাথে এখনও যোগাযোগ করেননি। তারপরও তারা হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মো.ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন সমস্যা নিয়ে এখনও কেউ আসেননি। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে প্রাণির খামারের ঘরের ছাদ কিংবা টিনের চালে ভেজা চট দিলে উপকার পাওয়া যাবে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রচারণা চালাচ্ছি।’ জেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, জেলার ৯ উপজেলায় লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালী মুরগির খামার রয়েছে ১ হাজার ৪৩২টি। এরমধ্যে নিবন্ধিত খামার ২১১টি এবং অনিবন্ধিত খামার ১ হাজার ২২১টি। এসব খামারের মধ্যে ব্রয়লার মুরগির নিবন্ধিত খামার রয়েছে ১৭৪টি ও অনিবন্ধিত ১ হাজার ১৯টি।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণ:
অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোক করে মুরগি মারা যাওয়ার প্রাক্কালে যে ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
শ্বাস কষ্ট এবং হা করে জোরে জোরে শ্বাস নিবে। ঝুঁটি বিবর্ণ হবে। শরীর থেকে পাখা দূরে সরিয়ে রাখবে। ঝিমুনি ধরা, ডায়রিয়া এবং খিঁচুনিও হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক করেও অনেক সময় মুরগি মারা যায়।
অতিরিক্ত তাপমাত্রায় মুরগির মৃত্যুহার কমাতে পারেন যেভাবে:
১. অবশ্যই খামারে ঠাণ্ডা ও পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করবেন। পানি ঠাণ্ডা করতে প্রয়োজনে বরফের টুকরা দিয়ে রাখতে পারেন। খামার ঘর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখবেন।
২. মুরগি অতিরিক্ত ঘন করা যাবে না (ছবির মতো করবেন তো মরবেন)।
৩. সূর্যের আলো যেন ঘরে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ করতে হবে। পর্দা সম্পূর্ণ খুলে ফেলতে পারেন। যে পাশে রোদ যাবে সেদিকে টেনে লম্বা করে বারান্দার মতো করে রাখতে পারেন। কিন্তু নামিয়ে রেখে রোদ ঠেকাতে যাবেন না।
৪. মুরগিকে দিনের শীতল সময়ে খাবার পরিবেশন করবেন। দুপুরে অতিরিক্ত গরমে খাবার দিবেন না। তবে পানির পাত্র কখনই ফাঁকা রাখা যাবে না।
৫. টিনের চালে চটের বস্তা ভিজিয়ে দিন। সিলিং ফ্যান ব্যবহারের চেয়ে স্ট্যান্ড ফ্যান ব্যবহার করা উত্তম।
৬. মুরগিকে শান্তভাবে বসে থাকতে দিন। মুরগির ইচ্ছা হলে পানি পান করবে। মনে রাখবেন, এসময় বারবার মুরগিকে তুলে দিয়ে পানি পান করানোর দায়িত্ব আপনার নয়।
৭. ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণীচিকিৎসকের পরামর্শে ভাল কোনো ইলেক্ট্রোলাইট পরিবেশন করুন।