জার্মানির ওবিসিটি বা স্থূলতা সহায়তা কেন্দ্রের মিশায়েল ভিয়র্ৎসও বহুকাল এমন সুইটনার ব্যবহার করেছেন৷ তখন তাঁর ওজন দাঁড়িয়েছিল দেড়শ কিলো৷ তাই দ্রুত মেদ ঝরানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল৷
ক্যালোরি বাঁচাতে তিনি প্রচলিত চিনি খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁর ওজন কিছুতেই কমছিলো না৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মিশায়েল বলেন, ‘‘আপনি যদি শুধু কম চিনি বা কম ফ্যাটসম্পন্ন ‘লাইট’ জাতীয় পণ্য খান এবং আদৌ কোনো সুফল না পান, তখন নিজেকে নিয়ে সংশয় দেখা দেয়৷ তিন-চার সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চালিয়েও সাফল্য না পেলে পুরোপুরি ভেঙে পড়তে পারেন৷”
পুষ্টিবিদ হিসেবে মাটিয়াস রিডেল এমন কাহিনি প্রায়ই শোনেন৷ চিনির বিকল্প পণ্য সম্পর্কে তাঁর স্পষ্ট মত রয়েছে৷ তাঁর মতে, সেগুলি মোটেই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে না৷ কারণ মিষ্টি খাবার ইচ্ছা থেকেই যায়৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘সুইটনার আসলে চিনির মতোই শরীরে, শরীরের আন্ত্রিক প্রণালীতে একই রিসেপ্টরকে প্রভাবিত করে৷ অর্থাৎ মিষ্টি খাবার ইচ্ছা থেকেই যায়৷ চিনির বদলে সুইটনার খেলে আমি গোটা সমস্যার শুধু একটা ছোট অংশের সমাধান করতে পারি৷ আসলে শরীরে অতিরিক্ত মাত্রার কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকলে এবং অতি কম পরিমাণ শাকসবজি খেলেই স্থূলতা দেখা যায়৷ সুইটনার দিয়ে আমি সেই সমস্যার কোনো সমাধান করতে পারি না৷”
ব্রিটেনের এক সাম্প্রতিক গবেষণা অনুযায়ী সুইটনার শরীরে নানা রোগ প্রবেশের পথ সুগম করতে পারে৷ গবেষকরা পেট্রি ডিশে কোষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখাতে পেরেছেন, যে সুইটনার অন্ত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটিরিয়ার বৈশিষ্ট্য বদলে দিতে পারে৷
সুইটনার খেলে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া অন্ত্রের প্রাচীরের সুরক্ষার স্তর ভেদ করতে পারে বলে পরীক্ষায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে৷ এর ফলে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ দেখা দিতে পারে৷ পুষ্টিবিদ ও ইমিউনোলজিস্ট হিসেবে প্রো. ড. ক্রিস্টিয়ান সিনা বলেন, ‘‘এই প্রভাব সম্পর্কে আগে আমরা বেশি কিছু জানতাম না৷ সেটা যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তাহলে দুশ্চিন্তার কারণ আছে বৈকি৷ নতুন খাদ্য পরীক্ষা এবং খাদ্যের উপাদানের নতুন মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে আমাদের অবশেষে অন্ত্র ও অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার দিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে৷ তবে এটা মনে রাখা জরুরি, যে সন্দেহ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷”
ব্রিটিশ গবেষকরা ল্যাবে পরীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছেন, যে ঘনঘন সুইটনার খেলে অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য কমে যায়৷
অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সামুয়েল হুবারও একই প্রবণতা লক্ষ্য করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কিছু মানুষ সুইটনার খেলে তাদের মাইক্রোবায়োমের নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে গোটা শরীরের উপর তার প্রভাব পড়ে৷ অন্ত্রের ভারসাম্য, মিউকাস মেমব্রেনের অবস্থা বদলে যেতে পারে৷ চিনিসহ অন্যান্য খাদ্য খাওয়ার ধরনের উপরও প্রভাব পড়তে পারে৷”
মিশায়েল ভিয়র্ৎসের ক্ষেত্রে সুইটনার মারাত্মক গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা সৃষ্টি করেছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘তারপর সুইটনার ত্যাগ করতেই ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে গেল৷ পেটেও আর কোনো ব্যথা রইলো না৷ তখন বুঝলাম, সুইটনার আমার জন্য উপযুক্ত নয়৷”
পুষ্টিবিদরা যতটা সম্ভব কৃত্রিম সুইটনার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন৷ সেইসঙ্গে চিনি খাওয়াও সীমিত রাখতে বলেন৷ পুষ্টিবিদ হিসেবে মাটিয়াস রিডেল বলেন, ‘‘আমি ধাপে ধাপে চিনি খাওয়া কমানোর পরামর্শ দেই৷ কফিতে সত্যি চিনি লাগবে কিনা, ভেবে দেখতে বলি৷ অথবা অর্ধেক পরিমাণ চিনি খেতে বলি৷ ফলের রসও কম খাওয়া উচিত৷ খেতে হলে আরও পানি মিশিয়ে পরিমাণ কমালে ভালো হয়৷ যেখানেই সম্ভব চিনি কমাতে হবে৷”
মিশায়েল ভিয়র্ৎস সেই পরামর্শ মেনে ৪০ কিলোরও বেশি ওজন কমাতে পেরেছেন৷ ইতোমধ্যে তাঁর স্বাদও বদলে গেছে৷ প্রাকৃতিক উপাদানের মিষ্টতাই তাঁর জন্য যথেষ্ট৷
-ডয়েচে ভেলে