মো. আজিজার রহমান, খানসামা (দিনাজপুর) থেকে: খানসামা উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য কয়েক দশক আগে নির্মিত পরিত্যক্ত কোয়ার্টারগুলো তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোয়ার্টারগুলো এখন ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে দীর্ঘ দিন ধরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদের পাশেই আলোকঝাড়ী ইউনিয়নে দুটি ও পাকেরহাটে আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নে একটি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কোয়াটার জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। একতলা ভবনের জরাজীর্ণ ছাদ ও সিমেন্ট খুলে পড়া দেয়াল। কোয়ার্টারের ভেতরে ঝোঁপ-ঝাড়ে পরিপূর্ণ। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা চারপাশ অথচ ভিতরে জন্মেছে বড় বড় গাছ। দেওয়ালের চটা উঠে গেছে। ভবনের দরজাগুলোতে ধরেছে মরিচা, অনেক জানালাই ভাঙ্গা। বিএস কোয়ার্টারগুলোতে একটি বাথরুম, একটি রান্নাঘর ও দুটি শয়নকক্ষ । এক সময় ব্লক সুপারভাইজার-বিএসরা বসবাস করতেন।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালের দিকে তৎকালীন সরকার এই ভবনগুলো প্রথমে কৃষি বীজাগার হিসেবে নির্মাণ করে। পরে এই কর্মসূচি বাতিল করা হলে সরকার সিড গোডাউনগুলো ১৯৮০ সালের দিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের বিএসদের বসবাসের জন্য সংস্কার করে কোয়ার্টারে পরিণত করা হয়। মূলত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের পরামর্শ ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে খুব সহজেই সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণগুলো পৌঁছে দেওয়া হতো। এসব কোয়ার্টারে মাত্র ৫০ টাকা ভাড়ায় থাকতেন বিএসরা।
বর্তমান ব্লক সুপার ভাইজার (বিএস) পদের নাম পরিবর্তন করে সরকার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) নামকরণ হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোকছেদ আলী বলেন, ’আমি ছোটবেলা থেকেই কোয়ার্টার এ বাকী সাহেব ও হান্নান সাহেবদের বসবাস করতে দেখেছি। উনারা অবসর নেওয়ার পর আর কেউ আসেননি। বর্তমানে ভবন দুটি ফাঁকা পড়ে আছে। কোয়ার্টার্সে বিএস থাকলে কৃষকরা উপকৃত হতো। তাদের কাছ থেকে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও কৃষি বিষয়ে পরামর্শ পেতো।
ওই এলাকার স্থানীয় কৃষক আঃ সালাম বলেন, ’ওই সময় বিএস কোয়ার্টার থাকার কারণে সরাসরি পরামর্শ পেতাম। বর্তমানে কোয়ার্টার না থাকায় ঠিকমতো সেবা পাই না। এতে আমাদের কৃষিকাজ করতে খুব সমস্যা হয়। আমরা চাই এই কোয়ার্টারগুলো আবার চালু হোক।’
পাকেরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস আলী বলেন, ’আমি অনেক আগেই এখানে এক কর্মকর্তাকে বসবাস করতে দেখেছি। বর্তমানে এই ভবনটিগুলোকে আমি ভূতের বাড়ি হিসেবেই জানি। এরপর থেকে কোনো দিন কোনো কর্মকর্তাকে এখানে আসতে দেখিনি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) হাবিবা আক্তার বলেন, ’ব্লক সুপারভাইজার (বিএস) কোয়ার্টারগুলো কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জায়গা। কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত থাকায় কেউ ব্যবহার করছে না। এ ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠানো হয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান বলেন, ’সারা দেশের বিএস কোয়ার্টারের চিত্র একই। এটা আসলে স্থানীয়ভাবে সমাধানের বিষয় না, এটা কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্যার সমাধান হবে। যদি কোন প্রকল্প হয়ে থাকে তাহলে মেরামত, সংস্কার ও পূর্ন নির্মাণ হবে। আমাদের এই সম্পদগুলো আসলেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতি নিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করি এবং রিপোর্ট পাঠাই। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেবেন।’