‘ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত চট্টগ্রামে গাড়ি চলবে না’- বেলায়েত
নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে হঠাৎ করেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বাড়তি দামের সাথে ভাড়া সমন্বয় করার দাবিতে শনিবার ভোর থেকেই নগরীতে গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
শনিবার (৬ আগস্ট) সরজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে নগরের ইপিজেড মোড়, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস সহ প্রায় সব এলাকায় পরিবহন সংকটে মোড়ে মোড়ে কারখানা ও অফিসমুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে। এতে করে সিএনজি-রিকশার চাহিদাও বেড়ে গেছে। রাস্তায় চলাচলরত অধিকাংশ সিএনজিতে যাত্রী দেখা গেছে। তাই খালি কোন সিএনজি আসলেই তা ভাড়া করতে মানুষ হুড়োহুড়ি করছে। অনেকেই অফিসের পথে ছুটেছেন ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে। সামর্থ্য না থাকায় শ্রমজীবীদের অনেকেই ভ্যান ভাড়া করে গন্তব্যে গিয়েছেন। আবার বাড়তি সিএনজি আর রিকশা ভাড়া দেখে হেটেই কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে অনেককেই।
ইপিজেড থেকে জিইসি এলাকায় যাবেন বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রাহাত বিন। তিনি জানান, ২ ঘণ্টা ধরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কোন গাড়ি পাচ্ছি না। সিএনজি দেখলাম তারা ১৮০ টাকার ভাড়া ৩৫০ টাকা বলছে। রিকশায় যেতে চাইলাম তারা ২০০ টাকা চাইছে। সুযোগে যে যেভাবে পারছে ভাড়া চাইছে, বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে।
দেওয়ানহাট এলাকায় কথা হয় গার্মেন্টসকর্মী রোজিনার সঙ্গে। সে যাবে ইপিজেড। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে এক ঘণ্টার উপরে অপেক্ষা করেও পায়নি কোন গণপরিবহন। এদিকে সামর্থ্য না থাকায় সিএনজিতেও যেতে পারছে না সে। রোজিনা বলেন, কই যাব আমরা? যার যেভাবে ইচ্ছা দাম বাড়াচ্ছে। ১৫ টাকা দিয়ে কারখানার সামনে নামতে পারি। দিন দিন খরচ বাড়ছে। কিন্তু আমাদের ইনকাম বাড়ছে না।
লালখানবাজার মোড়ে রিকশাওয়ালার সঙ্গে ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা করছেন মো. নাসিম। তিনি বলেন, লালখানবাজার থেকে মুরাদপুর যাবো। গাড়ি না পেয়ে রিকশায় যাবার সিদ্ধান্ত নেই। ভাড়া শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ভাই। ভাড়া নাকি ১২০ টাকা দিতে হবে। আজব দেশে বাস করি। কোন নিয়ম নেই।
গ্যাসের দাম তো বাড়েনি তবুও বাড়তি ভাড়া কেন নিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সিএনজিচালক মো. নেজাম বলেন, যাত্রীর পরিমাণ বাইড়া গেছে। আমরা বাড়তি টাকা চাচ্ছিনা। যাত্রীরাই বাড়তি টাকা দিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বিজনেসটুডে২৪ কে জানান, রাতের আধারে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পেট্রোল পাম্পগুলো আমাদের তেল দেয়নি। বাড়তি দামে তেল ঢুকিয়ে গাড়ি চালালে আমাদের এক পয়সাও লাভ হবে না। শ্রমিকরা বাঁচবে কিভাবে? তাই আমরা আজ ভোর ৬টা থেকে গণপরিবহন বন্ধ রেখেছি। বর্ধিত ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় না করা পর্যন্ত আমাদের কোন গাড়ি রাস্তায় নামবে না।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়িয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ এই দাম বৃদ্ধির হার প্রায় ৪২ শতাংশ। লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেনের দাম বেড়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ পেট্রল ও অকটেনের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশেরও বেশি।