- সংবাদপত্র মালিকদের অমানবিক আচরণ চরম বিস্ময়কর: মোহাম্মদ আলী
- বকেয়া পরিশোধ করে পত্রিকা চালু করতে হবে: রতন কান্তি দেবাশীষ
- বন্ধ করতে চাইলে লে অফ ঘোষণা করুন: চৌধুরী ফরিদ
চট্টগ্রাম: সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ ও চট্টগ্রামে মালিক কর্তৃক বন্ধ রাখা পাঁচ পত্রিকার প্রকাশনা চালুর দাবিতে সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সাংবাদিকরা যখন ন্যায্য পাওনা আদায়ের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে তখন মালিকপক্ষ কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঘোষণা ছাড়াই পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে রেখেছে। সরকারি সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরও আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া পত্রিকা বন্ধ করে সাংবাদিক ইউনিয়নের আন্দোলন নস্যাৎ করা যাবে না।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় ৭ জন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছে, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ৩ শতাধিক। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করলাম, মালিকপক্ষ আক্রান্ত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর ন্যূনতম প্রয়োজনও বোধ করেননি। স্বনামধন্য পত্রিকাসমূহও মধ্যরাতে পর্যন্ত কোনো ধরনের যানবাহন সুবিধা না দিয়ে সাংবাদিক-কর্মচারীদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এমনকি মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোন ব্যস্থা নেয়নি কর্তপক্ষ। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সংবাদপত্র মালিকদের এ অমানবিক আচরণ শুধু দুঃখজনকই নয়, চরম বিস্ময়কর বটে।
এসময় অবিলম্বে সাংবাদিকদের পাওনা পরিশোধ ও পত্রিকা চালু না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন সিইউজে সভাপতি।
সমাবেশে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ বলেন, মালিকরা পত্রিকা বন্ধ করতে চাইলে সরকারি নিয়ম মেনে লে-অফ ঘোষণা করার পর সাংবাদিক কর্মচারিদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে হবে। পত্রিকার নিবন্ধন বাতিলের আবেদন করতে হবে। কোন ঘোষণা ছাড়া পত্রিকা বন্ধ করা দু:খজনক।
তিনি এসময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যা সমাধানের জন্য মালিকপক্ষকে আহ্বান জানান।
সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম বলেন, একটি দালালচক্রকে ব্যবহার করে মালিকরা মনে করছেন সিইউজের আন্দোলন নস্যাৎ করবেন। অতীতকে ভুলে গিয়ে সারাদেশে সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা এ সংগঠনকে দুর্বল মনে করলে মালিকরা ভুল করবেন। আর দালালদের পরিণতিও সবসময় হয়েছে ভয়াবহ। সাংবাদিকদের প্রাপ্য সকল বকেয়া ও দুই ঈদের পূর্ণ বোনাস দ্রুত প্রদান করে পুনরায় পত্রিকা প্রকাশের কার্যক্রম চালু করে সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলার থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাষ্ট্রের সকল প্রশাসন যখন এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত সেখানে চট্টগ্রামের ৫টি পত্রিকা প্রকাশনা লাগাতার বন্ধ রেখে বৃহত্তর চট্টগ্রামের জনগণকে তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। পত্রিকা বন্ধ রাখার কারণে মানুষ চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির খবর জানতে পারছেন না। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই মালিকপক্ষ বেআইনীভাবে পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ রাখার পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তাদের এই পদক্ষেপ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে দূর্বল করার অপচেষ্টা।
সমাবেশে সিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ বলেন, আগস্ট মাসের ১০ তারিখ পার হতে চললেও এখন পর্যন্ত জুলাই মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। অবিলম্বে ঈদের বকেয়া বোনাস ও জুলাই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে পত্রিকা চালু করতে হবে।
সমাবেশে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিইউজে সিনিয়র সহসভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ, সহসভাপতি অনিন্দ্য টিটো ও টিভি ইউনিটের প্রধান মাসুদুল হক।
উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ, অর্থ সম্পাদক কাশেম শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইফতেখার ফয়সাল, বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ, নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মহরম হোসাইন, দৈনিক পূর্বদেশ ইউনিটের প্রধান জীবক বড়–য়া, প্রতিনিধি ইউনিটের ডেপুটি প্রধান সোহেল সরওয়ার, টিভি ইউনিটের ডেপুটি প্রধান তৌহিদুল আলম, সিইউজে সদস্য মোস্তাফা ইউসুফ, ফরিদ উদ্দিন, আলাউদ্দিন হোসেন দুলাল, চৌধুরী আহসান খুররম, মাখন লাল সরকার, চম্পক চক্রবর্তী, আবীর চক্রবর্তী, রুমন ভট্টাচার্য্য, মিনহাজুল ইসলাম, ইমরান এমি, বাচ্চু বড়–য়া, সুজন আচার্য্য, কাউসার আলম, সাইমন আল মুরাদসহ চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন ও টিভি সাংবাদিকরা।
-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি