বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: চলতি অর্থবছরে রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাট খাত। এ বছর করোনা মহামারীসহ নানা সংকটের মধ্যে পার হচ্ছে দেশের কৃষি খাত। বিভিন্ন জেলায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, অতি বর্ষণ এবং শিলাবৃষ্টির কারণে ব্যাহত হয়েছে কৃষি উৎপাদন। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাটশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি করে ৩০ দশমিক ৭৫ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে মোট ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেশি এসেছিল ৭ শতাংশ।
গত অর্থবছরে পাটসুতা রপ্তানি থেকে ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। অর্থাৎ মোট রপ্তানি ৬৪ শতাংশই এসেছিল পাটসুতা রপ্তানি থেকে। কাঁচাপাট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ডলার।
পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের। এছাড়া পাটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১৯ কোটি ডলারের।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের তিন মাসে ২১ কোটি ৮ লাখ ২ হাজার ডলারের পাটসুতা রপ্তানি হয়েছে। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫৩ শতাংশ।
কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ ৫ হাজার ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাটের তৈরি বস্তা, চট ও থলে রপ্তানি হয়েছে ৩ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার ডলারের। আয় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
পাট ও পাটসুতা দিয়ে হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ ২ হাজার ডলার, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া ২ কোটি ৩ লাখ ৯ হাজার ডলার পাটের তৈরি অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশ পাট রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুট অ্যাসেশিয়েশনের (বিজিএ) সচিব আবদুল কাইয়ুম বলেন, চলতি অর্থবছরের পাট রপ্তানির হিসাবে টাকার পরিমাণে প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। পাটের দাম বাড়ার কারণে টাকায় প্রবৃদ্ধির পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে। তবে আমাদের হিসাব করতে হবে পাট পরিমাণে কতটুকু প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই হিসাব করলেই আসল রপ্তানি বৃদ্ধির পরিমাণ জানা যাবে। আগে যদি পাঁচ টন পাট রপ্তানি হতো আর এখন যদি ১০ টন রপ্তানি হয় সেক্ষেত্রে পাঁচ টনকে আসল প্রবৃদ্ধি হিসাবে ধরব আমরা। তবে আগের থেকে এখন পাটের অবস্থান ভালো হচ্ছে। আগের সোনালি আঁশের দিন ফেরত আসছে। দেশে-বিদেশে সব জায়গায় পাটের চাহিদা বাড়ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনা মহামারীর মধ্যেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। এ শিল্পে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করে, যা ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক বাজারে আমরা পাটের যে চাহিদা দেখছি তা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। তাই এই প্রতিযোগিতার বাজার ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশের পাট খাতের আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। মানুষ এখন পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের দিকে যাচ্ছে। তাই গেল কয়েকবছর ধরে এই বাজারের চাহিদাও বাড়ছে।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য সরকার বেশ কিছু মেনডেটরি দিয়েছেন, তা শক্তিশালীভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশেও পাটের চাহিদা বাড়বে।