Home First Lead চা উৎপাদনে বিপর্যয়

চা উৎপাদনে বিপর্যয়

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: খরায় তছনছ করে দিয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা বাগান মালিকদের স্বপ্ন। মওসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি মারাত্মক সংকট তৈরি করে।তার জেরে কোন কোন বাগান ভয়াবহ রকমের উৎপাদন বিপর্যয়ে পড়েছে।

গত বছরে বাম্পার ফসলের পর এ বছরে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল বাগান নির্বাহিদের। শুরুতে অনাবৃষ্টি তাদের আশাকে তছনছ করে দিয়েছে। পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে তবে তা পাশাপাশি কাছাকাছি বাগানের কোথাও হয়েছে কোথাও হয়নি। আবার কোথাও বেশি হয়েছে কোথাও কম বা একেবারে না বলে জানালেন বাংলাদেশীয় চা সংসদ, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হালদা ভ্যালি টি এস্টেটের সিনিয়র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম। এভাবে বৃষ্টিপাতে তারতম্য হয়েছে উৎপাদনেও।

চট্টগ্রামের ২০ বাগানের যে উৎপাদন তথ্য পাওয়া গেছে তা বেশ উদ্বেগের। ১০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় কোন কোন বাগান পিছিয়ে পড়েছে ২৭৫ শতাংশ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সম্মিলিতভাবে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় কমেছে ৩০ শতাংশ। কেবল এপ্রিল মাসে হ্রাস পেয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৭০ কেজি। গত বছরে এপ্রিল পর্যন্ত মোট পাতা পাওয়া গিয়েছিল ৮,১০,৮৮৯ কেজি। এবারে তা ৬,২৩,৪১৯ কেজি। এ বছর এপ্রিলে মোট পাওয়া গেছে ৩,৬১,৮৮৬ কেজি। গত বছরের  এপ্রিলে তা ছিল ৫,২১,৪০৪ কেজি।

আয়তনের দিক থেকে এশিয়ার বৃহত্তম বাগান কর্ণফুলী টি এস্টেট উৎপাদন পিছিয়ে আছে প্রায় ৭১ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট উৎপাদন ১,১২,৪৩৩ কেজি। গত বছরে একই সময়ে তা ছিল ১,৯১,৯৬০ কেজি। পিছিয়ে থাকার হার ৭০.৭৩ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে আছে বারমাসিয়া টি  এস্টেট। গত বছরের তুলনায় তা ২৭৫ শতাংশ। গত বছর এপ্রিল শেষে তাদের মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১,০১,৫১৩ কেজি। এবারে ২৭,১০২ কেজি।

প্রায় ৮৬ শতাংশ পিছিয়ে পড়েছে এলাহি নূর টি এস্টেট। এপ্রিল পর্যন্ত ১৮,০৬২ কেজি উৎপাদন হয়েছে। গত বছর একই সময়ে ছিল ৩৩,৫৬০।

পঞ্চবটি টি এস্টেট গত বছরে যেখানে এপ্রিল পর্যন্ত ১৪,৯৬১ কেজি উৎপাদন করে, সেখানে এবারে তা ৯,০৫৯ কেজি। প্রায় ৬৫ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।

তবে, এমন খারাপ পরিস্থিতিতেও রামগড় টি এস্টেট অগ্রগতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, তাদের নিজস্ব সেচ ব্যবস্থা রয়েছে। আবার বৃষ্টিপাতও অধিকতর পাওয়া গেছে। এপ্রিলে সেখানে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ৪.৬৪ ইঞ্চি। আর একই মালিকানাধীন বাগান, অদূরে অবস্থিত হালদা-ভ্যালি টি এস্টেটে এর পরিমাণ ছিল ২.১১ ইঞ্চি।

রামগড় টি এস্টেটে এপ্রিল পর্যন্ত মোট উৎপাদন ৫৬,২১১ কেজি। একই সময়ে গত বছরে ছিল ২৩,৯৫৪ কেজি। ৫৭ শতাংশ বেশি গত বছরের তুলনায়। হালদা ভ্যালিও এগিয়ে আছে। পরিমাণ প্রায় ১৮ শতাংশ। গত বছরের ৫৮,৯৩৩ কেজির বিপরীতে এবারে ৭১,৪১২ কেজি।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, মওসুমের প্রথমদিকে চট্টগ্রামে আবহাওয়া ছিল ভাল। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তাতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল চা শিল্পের জন্য। গাছসমূহ ছিল স্বাস্থ্যবান। মার্চের প্রথমদিকে প্লাকিং শুরু হয়। অধিক পরিমাণে পাতা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যে অবস্থা আবহাওয়ার তাতে প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া বেশ কঠিন হবে বিশেষতঃ যেসব বাগানে নিজস্ব সেচ ব্যবস্থা নেই সেগুলোর।

পঞ্চবটি টি এস্টেটের ম্যানেজার অর্জুন কুমার নাথ জানান, গত বছর এপ্রিলে যেখানে প্রতিদিন ৮/৯ হাজার কেজি গ্রিণ লিফ সংগৃহিত হয়েছে সেখানে এবছর একই সময়ে তা হয়েছে কোনোদিন ১০০০ কেজি আর কোনোদিন ১২০০ কেজি। রাতদিন কারখানা চলতো গত বছর এপ্রিলে। গত এপ্রিলে চালু ছিল একদিন পর একদিন। চলতি বছরে উৎপাদন লক্ষ্য অর্জনে বেশ সংকট যাবে বলে তিনিআশংকা করেন।