কামরুল ইসলাম, মৌ্লভীবাজার: প্রচন্ড গরমে আর রোদের দাপটে চা গাছের পাতা গেছে ঝলসে। বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। গাছে দুটি পাতা একটি কুঁড়িও দেখা যাচ্ছিল না। বৃষ্টিপাতের অভাবে বেশিরভাগ চা গাছ লাল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানা রোগবালাই। পোকার আক্রমণ নেমে আসে। এমন অবস্থায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত আশীর্বাদ চা বাগানগুলির কাছে। বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজারে, সিলেটে। চট্টগ্রামেও।
বৃষ্টিপাতে যেমন মাটির গভীরে পানি যাবে। চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসবে।প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে চা বাগান। শ্রীমঙ্গল চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন বিজ্ঞানি জানালেন, ভালো মানের চা পাতা উৎপাদনের জন্য যেমন ঝলমলে রোদের লম্বা দিন প্রয়োজন, একইভাবে প্রয়োজন বৃষ্টি। সেটা শুধুমাত্র মরশুমের শুরুর পাতা উৎপাদনের জন্য নয়। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সেচের পানি জোগানের জন্য বিশেষভাবে দরকার।
মওসুমের প্রথমদিকে সময় মত বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। দুটি পাতা একটি কুঁড়িও দেখা যাচ্ছিল না। ক্রমে গাছগুলিতে লালমাকড়সার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। পর্যাপ্ত পানির অভাবে বেশিরভাগ চা গাছ লাল হতে শুরু করে। এমন অবস্থার মধ্যে বৃষ্টি স্বস্তি এনেছে বাগানের মালিক, শ্রমিকদের।
আগামী মে মাস থেকেই সেকেন্ড ফ্লাশ চা পাতা তোলার কাজ শুরু হবে। মার্চ মাসে বৃষ্টি খুব কম হওয়ায় তা ফার্স্ট ফ্লাশে প্রভাব ফেলেছিল। তা ছাড়া, গত বছরের তুলনায় পাতার উৎপাদনের হারও ছিল অনেক কম। সেই ঘাটতি সেকেন্ড ক্লাসে কতটা মিটবে সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে চা বলয়।
বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। চা বাগানের দুটি পাতা একটি কুঁড়িও দেখা যাচ্ছিল না। ক্রমে গাছগুলিতে রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। পর্যাপ্ত জলের অভাবে বেশিরভাগ চা গাছ লাল হতে শুরু করে।
মাধবপুর চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক তাপস কুন্ড জানান, প্রকৃতি নির্ভর কৃষিজ পণ্য চা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চায়ের উৎপাদনও ভালো হয়। এর জন্য প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টি ও সূর্য কিরণ। প্রায় ৪ মাস আগ থেকেই চা বাগানের সেকশনগুলোতে চা গাছ ছাঁটাই করার কাজ শুরু করেছিল বাগান কর্তৃপক্ষ। ছাঁটাইয়ের কারণে চা বাগানে চলে এসেছিল রুক্ষ শুষ্কভাব। চা বাগানের জন্য সহনীয় তাপমাত্রার সীমা পেরিয়ে গেলে বিপত্তিতে পড়েন বাগান-সংশ্লিষ্টরা। বৃষ্টির অভাবে রুক্ষ বাগানে নতুন পাতার দেখা যাচ্ছিল না খুব একটা। এর মাঝে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সামান্য যা কুঁড়ি-পাতা ছিল তাও আক্রান্ত হতে শুরু করে।
চলতি মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় দুশ্চিন্তা বাড়ছিল মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানের মালিক-শ্রমিকদের। অনেক বাগানের চা পাতা পুড়ে যায়। চায়ের জন্য বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করতে হয়। প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। অনেক জায়গায় ইরিগেশন পৌঁছানো সম্ভব হয়না। তাছাড়া বর্ষায় যদি অতি বৃষ্টি হয় তাও চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার তাপদাহ হলেও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির ওপর তো নির্ভর করতেই হয়।
ইস্পাহানি জেরিন চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, খরা প্রথম দিকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। তবে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শ্রী গোবিন্দপুর চা বাগানের মালিক ও ন্যাশনাল টি কোম্পানির পরিচালক মো. মহসীন মিয়া মধু জানান, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর বৃষ্টির দেখা পেলাম। তবে ভালো চা উৎপাদনে আরও বৃষ্টির প্রয়োজন। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে আবারও বৃষ্টি দেখা দিলে ভালো চা উৎপাদন হবে। এই বৃষ্টির ফলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ভালো পাতা তৈরি হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ড প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক এ কে এম রফিকুল হক জানান, বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য অবশ্যই উপকারী। বিশেষভাবে নতুন চা গাছ যেগুলো আছে তার জন্য বেশি উপকারী। তারপর প্রুনিংকৃত চা গাছগুলো দ্রুত কুঁড়ি ছাড়বে বৃষ্টি হওয়ায়।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিসিএস) সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান জিএম গোলাম মোহাম্মদ শিবলি জানান, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে।