- খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতায় শত শত কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে
- ‘নতুন কোন প্রকল্প নয়, চাক্তাই খালের নাব্যতা ও প্রশস্ততা ফিরিয়ে দিন’
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার কারণে ৬ বছরে শত শত কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে।
রবিবার ( ১৫ নভেম্বর ) চিটগাং চেম্বারে বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এ কথা জানানো হয়।
খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয় তা নিরুপণে পরিচালিত সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট-এর উপর স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়ার লক্ষ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন প্ল্যানিং কমিশন প্রোগ্রাম ডিভিশনর চীফ (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আহসান হোসেন।
ডিজিটালফরমেটে সভাপতিত্ব করেন চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। অন্যদের মধ্যে প্রকল্প পরিচালক-এনআরপি ড. নুরুন নাহার, বুয়েট-এর ফ্যাকাল্টি অব আর্কিটেকচার এন্ড প্ল্যানিংয়ের ডীন প্রফেসর খন্দকার শাব্বির আহমেদ, চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ও অঞ্জন শেখর দাশ, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ, চট্টগ্রামর চ্যাপ্টার চেয়ারম্যান নাজমুল লাতিফ, সিটি প্ল্যানার আর্কিটেক্ট এ.কে.এম রেজাউল করিম ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক কাউন্সিলার জামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
স্টাডি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এনআরপির কনসালটেন্ট ড. রিয়াজ আক্তার মল্লিক, ড. নজরুল ইসলাম, ড. আবু তৈয়ব মোঃ শাহজাহান ও সুমাইয়া বিনতে মামুন।
খন্দকার আহসান হোসেন বলেন-যেকোন সমস্যা সমাধানে গবেষণা ও সমীক্ষা পরিচালনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাতুনগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয় তা নিরুপণের লক্ষ্যে এই রিসার্চ করা হয় এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরী করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পেশ করা হবে। তিনি এই জলাবদ্ধতা দূরীকরণে চিটাগাং চেম্বারকে অগ্রণী ভূমিকা পালনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-৩০০-৪০০ বছরের পুরানো এবং প্রায় ২৫০ বছর আগে নামকরণকৃত খাতুনগঞ্জে ২০০৪ সাল থেকে জলাবদ্ধতার কারণে দোকান ও গুদামের মালামাল নষ্ট হয়ে শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি চাকতাই খালকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
জয়েন্ট চীফ ও প্রকল্প পরিচালক-এনআরপি ড. নুরুন নাহার জলাবদ্ধতাকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ ও নির্দেশনা এ সমীক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করবে উল্লেখ করে নীতি নির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান।
প্রফেসর খন্দকার শাব্বির আহমেদ সমীক্ষা রিপোর্টকে বিজ্ঞানসম্মত উল্লেখ করে জানান রাজপথগুলো কাজে লাগিয়ে নগরীর বিন্যাস পুনরুদ্ধার করা যায়। তিনি এই সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে আরও পর্যালোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা এবং সরকারি, আন্তর্জাতিক বিশেষ করে জলবায়ু তহবিল ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় বাস্তবায়নের পরামর্শ প্রদান করেন।
চেম্বার পরিচালক মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) বলেন-খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ, চাকতাইসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যমান নালা নর্দমা একটির সাথে অপরটির সংযুক্ত হলেও তা হারিয়ে গেছে। এসব সংযোগ পুনরুদ্ধার করে আপাততঃ স্বল্পমেয়াদী সমাধানের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের বিষয় বিবেচনার আহবান জানান।
সাবেক কাউন্সিলার জামাল হোসেন বলেন, ২০০৩ -২০০৪ সালে চাকতাই খালের তলা পাকাকরণের কাজটি ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যাচাই বাছাই ছাড়া তলার মাটি অপসারণ ব্যতিত বহদ্দারহাট থেকে খাতুনগঞ্জের পোড়াভিটা পর্যন্ত চার কিলোমিটারে তলা পাকা করণে খালের তলদেশ ৩-৪ ফুট ভরাট হয়ে যায় এবং বর্তমানে পাকার উপরে ৩/৪ ফুট বর্জ্য আবর্জনায় ভরাট। সব মিলিয়ে মৃত প্রায় চাকতাই খাল। সংকুচিত নৌ বাণিজ্য। বর্ষা মওসুমে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারে তলিয়ে যায় এই বাণিজ্য পাড়া। তিনি বলেন, আমরা নতুন কোন পরিকল্পনা চাইনা, চাই শুধু বহদ্দার হাট থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত চাকতাই খালের নাব্যতা ও প্রশস্থতা তা ফিরিয়ে দিলে নৌ বাণিজ্য ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে চাকতাই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।