বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
পৃথিবী জুড়ে যে অসংখ্য ভাষা ছড়িয়ে রয়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে সেই সব ভাষার ব্যাকরণের একটি অন্যতম শর্ত হল বাক্য গঠন। সমস্ত ভাষাতেই বাক্য গঠনের প্রধানতম শর্ত হল – পূর্ণ বাক্য গঠন। অর্থাৎ বাক্যটি পড়ে যেন তার অর্থ সহজেই অনুধাবন করতে পারা যায় । বিশ্বের প্রাচীনতম লিখিত পূর্ণ বাক্য কোনটি এই প্রশ্ন যদি কখনো আপনার মাথায় এসে থাকে এবং আপনি যদি এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে না পেয়ে হতাশায় আপনার আপনার চুল ছিড়েছেন তাহলে বলতে হবে আপনি আপনার উত্তর পেয়েই গেছেন কারণ পৃথিবীর প্রাচীনতম লিখিত পূর্ণ বাক্য টি চুল নিয়েই লেখা – “May this tusk root out the lice of the hair and the beard.” বঙ্গানুবাদ করলে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘হাতির দাঁতের এই চিরুনি যেন চুল ও দাড়ির উকুন বের করতে সফল হয়।’
ইজরায়েলের লাচিশ শহরের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খননের কাজ শুরু হয়েছে বিগত কয়েক বছর থেকেই। এর আগে বেশ কিছু মাটির পাত্র, কাঠ ও পাথরের হাতিয়ার উদ্ধার হলেও সম্প্রতি সেই শহরে প্রত্নতত্ত্ববিদরা সন্ধান পেলেন ৩৭০০ বছরের প্রাচীন হাতির দাঁতের তৈরি একটি চিরুনির যার মধ্যে কানানি লিপিতে একটি বাক্য লেখা ছিল। ১৭টি কানানি অক্ষরে সাজিয়ে খোদাই করে লেখা সেই বাক্যটির অর্থ – ‘হাতির দাঁতের এই চিরুনি যেন চুল ও দাড়ির উকুন বের করতে সফল হয়।প্রত্নতত্ত্ববিদদের যেটা অবাক করেছে সেটা এই বাক্যে কর্ম ও ক্রিয়াপদের সঠিক অবস্থান। তাঁদের কথায় পৃথিবীর প্রাচীনতম লিখিত পূর্ণ বাক্য এটিই। জেরুজালেম জার্নাল অফ আর্কিওলজি তে এই সম্প্রতি এই আবিষ্কারটি প্রকাশিত হয়েছে। এই কানানি লিপি ও কানানাইট বর্ণমালাকে বিশ্বের প্রাচীনতম বর্ণমালা হিসাবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। গ্রিক, আরবীয়, হিব্রু, ল্যাটিন, রুশ এবং ইংরেজি ভাষার বর্ণমালার জন্মই মূলত এই কানানি লিপি থেকে। কানানি ভাষী মানুষরা যে সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ বাক্য রচনা করতে জানতেন সাম্প্রতিক এই আবিষ্কার সেটাই প্রমাণ করলো।
৩.৬ সেমি লম্বা ও ২.৫ সেমি চওড়া হাতির দাঁত দ্বারা তৈরী এই চিরুনিটিতে রয়েছে ১৪টি দাঁত। মূলত, চুল থেকে উকুন নিষ্কাশনের জন্যই ব্যবহৃত এই চিরুনি। আণুবীক্ষণিক পরীক্ষায় চিরুনির দাঁত থেকে উকুনের দেহাবশেষও পেয়েছেন গবেষকরা। চিরুনি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হাতির দাঁত সম্ভবত মিশরের হাতি থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এই প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার এটা প্রমাণ করে যে মাথার উকুন এমনকি প্রাচীন জেরুজালেমের ধনী শ্রেণীগুলিকেও জর্জরিত করত এতটাই যে তাদের নির্মূল করার জন্য একটি বিশেষ চিরুনি তৈরি করা হয়েছিল।