Home Third Lead দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ জিয়াউল আহসানের

দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ জিয়াউল আহসানের

জিয়াউল আহসান। ছবি : সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: সাবেক সেনা কর্মকর্তা (বরখাস্ত) মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর  অনুসন্ধানে ।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন,  তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক। প্রায় ৪০ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) বিকালে দুদক প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুদক মহাপরিচালক বলেন, জিয়াউল আহসানের নামে ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দুজনের ১২ ব্যাংক হিসাবে ৩৪২ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জিয়াউল আহসান ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ কোটি ৮৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। এ ছাড়াও এই দম্পতির বিদেশে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচারের তথ্য মিলেছে। এসব ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।

জিয়াউল ও নুসরাতের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর মামলায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জিয়াউল আহসান গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রান্সজেকশন-২০১৮ অনুযায়ী বর্তমান অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন করে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার জমা করে, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা করে স্ত্রী নুসরাতের সহযোগিতা ও যোগসাজশে বিভিন্ন নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেন। জিয়াউল তার ৮ ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেন। তার উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ১টি বাগানবাড়ি, ঢাকায় ৮ তলা ও বরিশালে ৮ তলা বাড়িসহ মোট ৫টি বাড়ি এবং ৩টি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া প্লট, কৃষি ও অকৃষি মিলিয়ে মোট জমির পরিমাণ ৩৩৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

জিয়াউলের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রয়েছে ১ কোটি টাকা ও বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা রয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি মনে করছে, একজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে এই কাজে জিয়াউল আহসান ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব সম্পদ অর্জন করেছেন, যা দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নুসরাত জাহানের নামে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের খোঁজ পেয়েছে কমিশন। ৪টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২২ কোটি ৫০ লাখ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। নুসরাতের সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ প্লট জমি যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি ৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগসহ বিভিন্ন হিসাবে ৩ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা রয়েছে।

দুদক মনে করছে, স্বামী জিয়াউলের সহযোগিতা ও যোগসাজশে তিনি এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনসহ দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে।

২ লাখ মার্কিন ডলারে সস্ত্রীক নেন এন্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব: জিয়াউল তার পরিবারের পক্ষে ২০১৭ সালে মালেশিয়াহ মার্টিল কনসালটিং মালয়েশিয়া বারহেড এসডিএনবিএইচডি থেকে সি অ্যান্ড সি কানসালট্যান্সি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসে ২ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করার তথ্য পেয়েছে কমিশন। এ ছাড়া জিয়াউল কর্তৃক এন্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার ৫ বছর মেয়াদি বন্ডে প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার তথ্য মিলেছে। ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক (এফএবি) একটি হিসাবে ৬ মিলিয়ন দিরহাম বা ২০ কোটি টাকা, আবুধাবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (এডিসিবি) ইউএই হিসাবে প্রায় ২৩ মিলিয়ন দিরহাম বা ৭৫ কোটি টাকা, এএফএফআইএন ব্যাংক বারহেড মালয়েশিয়ায় প্রায় ৭ লাখ রিঙ্গিত বা ৭৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংক অব আমেরিকা (ইউএসএ) বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে দুদক।