- টাকার জন্য যারা কথা বলতো সবাই বাঙালি
- ২৮ মে ফোনে জানানো হয় মেরে ফেলা হচ্ছে
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
যশোর: লিবিয়ায় নিহতদের একজন রাকিবুল ইসলাম। বয়স ২০। যশোর সরকারি সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র । শোকে মুহ্যমান রাকিবুলের মা-বাবা।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নের খাটিয়াবাড়িয়া গ্রামের ইসরাফিল হোসেন ও মহিরুন নেসার ছেলে রাকিবুল। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে রাকিবুল ছোট। গত ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে রাকিবুল।
রাকিবুলের বড় ভাই সোহেল রানা জানান, ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি লিবিয়ার ত্রিপোলির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে রাকিবুল। লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ হওয়া দালালের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয় চার লাখ পনের হাজার টাকায়। বাংলাদেশ থেকে বাসে ভারতের কলকাতা, সেখান থেকে প্লেনে মুম্বাই, দুবাই, মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজিতে পৌঁছায় রাকিবুল। সেখানে সে দালালের ক্যাম্পে থাকত। ১৭/১৮ দিন সেখানে অবস্থান করলেও দালাল তাকে ত্রিপলি পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয়। তখন রাকিবুল নিজে বেনগাজিতে কাজ খুঁজে নেয়। এ অবস্থায় মে মাসে আব্দুল্লাহ নামে অপর এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয় রাকিবুলের। এ দালাল তাকে ৭০ হাজার টাকা দিলে ত্রিপলিতে পৌঁছে দেবে বলে জানিয়েছিল। তার সঙ্গে আরও কয়েকজনসহ ত্রিপোলির উদ্দেশে রওনা হয় রাকিবুল।
গত ১৭ মে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান সোহেল রানা।
সোহেল রানার সঙ্গে মুক্তিপণের টাকার জন্য যোগাযোগ করত পাচারকারী চক্র। টাকার দাবিতে তার সঙ্গে যারা কথা বলেছে, তারা সবাই বাঙালি। ১৮ মে তার মোবাইল ফোনে ইমো অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলা হয়, তার ভাইকে পেতে হলে ১২ হাজার ডলার পৌঁছে দিতে হবে দুবাইতে। না হলে তাকে মেরে ফেলা হবে। তারা লিবিয়ায় অবস্থানরত তাদের চাচাতো ভাই ফিরোজের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দুবাইতে পৌঁছে দিতে চাইলে রাজি হয়নি অপহরণকারীরা।
সোহেল রানা জানান, প্রতিদিন সকাল ও বিকালে সোহেল রানাকে ফোন দেয়া হতো এবং নির্যাতন করে রাকিবুলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়া হতো। রাকিবুল তাদের বলতো,‘আমার জীবন ভিক্ষা দে, তোরা টাকা ম্যানেজ করে দে’। ২৮ মে একটি ফোন থেকে রাকিব জানায়, তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। এরপর তারা জানতে পারেন রাকিবসহ ২৬ বাংলাদেশিকে হত্যার কথা।
রাকিবুলের বাবা ইসরাফিল বলেন, সন্তানের জীবন বাঁচানো জন্য এক পর্যায়ে তারা বাড়ির ভিটা ও জমি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন। মুক্তিপণ দাবিকারীদের কাছ থেকে ১ জুন পর্যন্ত সময় নেয়া হয়। পাঠানোর আগেই খবর এল দালাল চক্র লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে রাকিবুলসহ ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে।