বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশর (টিসিবি) ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। চলতি ( ২০২০-২০২১)
অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩১ কোটি টাকারও বেশি। যেখানে গেল অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৮২ কোটি ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৪ টাকা।
গেল অর্থবছরের জন্য ভর্তুকির এ অর্থ ছাড়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ প্রস্তাবে বলা হয়, পণ্য সংগ্রহ করার জন্য টিসিবি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির বিপরীতে ব্যাংক থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণ করেছে। বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে কোনো কোনো সময় স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পণ্য কেনা হয়। আবার ২ থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর পরিশোধ ও প্রতি কেজি বা লিটারে ৪ থেকে ৭ টাকা ডিলারদের পরিচালন ব্যয় দিতে হয়। এভাবে ক্রয়মূল্য থেকে কম মূল্যে এসব পণ্য ভোক্তার কাছে বিক্রি করা হয়। তাই ২০২০-২০২১ অর্থবছরে টিসিবির অনুকূলে ৪৩১ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বিভিন্ন সময় টিসিবি ট্রাক সেল ও খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে ১১ হাজার ৬৬৭ টন মসুর ডাল বিক্রি করেছে। পরিচালন ব্যয়সহ এ পরিমাণ ডালের ক্রয়মূল্য ৮৩ কোটি ৯৮ লাখ ৮ হাজার ৭৯০ টাকা। অথচ ১১ হাজার ৬৬৭ টন মসুর ডাল ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করে টিসিবি আয় করেছে ৫২ কোটি ৬ লাখ ৬২ হাজার ৮২ টাকা।
এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে টিসিবি পরিচালন ব্যয়সহ ২৩৩ কোটি টাকায় কিনে ৩৩ হাজার ৩৬১ টন চিনি বিক্রি করেছে। এ পরিমাণ চিনি বিক্রি করে সংস্থাটি আয় করেছে ১৪৯ কোটি ২ লাখ ৩৮ হাজার ২১১ টাকা। বাকি ৮৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার ৫৫৭ টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। একই বছরে ৪ কোটি ৭২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫২ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করেছে সংস্থাটি। পরিচালন ব্যয়সহ এ পরিমাণ সয়াবিন তেল ক্রয়ে খরচ হয়েছে ৫০৬ কোটি ৬৫ লাখ ৫ হাজার ৭৪৮ টাকা। আর বিক্রি করে টিসিবি আয় করেছে ৩৫২ কোটি ৩০ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৩ টাকা। বাকি ১৫৪ কোটি ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৮৫ টাকা ভর্তুকি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশের বাজার পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। পেঁয়াজের বাজারমূল্য স্থিতিশীল ও ভোক্তাসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে টিসিবি আমদানি ও স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ ক্রয় করে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬১ হাজার ৬৭ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। আনুষঙ্গিক খরচসহ এ পরিমাণ পেঁয়াজ ক্রয়ে ব্যয় হয়েছিল ২০৪ কোটি ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬০ টাকা। আর পরিচালন ব্যয় বাদে এসব পেঁয়াজ বিক্রি করে টিসিবি আয় করে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৬ টাকা। বাকি ১৩৭ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজার ৮৪ টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৭ হাজার ৪০৫ টন ছোলা বিক্রি করেছে টিসিবি। এ পরিমাণ ছোলার ক্রয়মূল্য ছিল ৫৩ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৭ টাকা। কিন্তু ছোলা বিক্রি করে পরিচালন ব্যয় বাদে টিসিবি আয় করেছে ৪০ কোটি ৪৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। বাকি ১২ কোটি ৯২ লাখ ৯২ হাজার ৯৭৫ টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। আর খেজুর বিক্রি বাবদ ১ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ৮৯৪ টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সাত পণ্যের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাবদ ৪২২ কোটি ৯৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫৮ টাকা এবং ব্যাংক ঋণের সুদ বাবদ ৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৫৮ টাকাসহ মোট ৪৩১ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র মো. হুমায়ূন কবির বলেন,২০১৯-২০২০
অর্থবছরে ১৮৫ থেকে ১৮৭ জন ডিলারের মাধ্যমে সারা দেশে আমরা পণ্য বিক্রি করতাম। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ডিলারের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়া আগের বছরের তুলনায় গত অর্থবছরে প্রায় দশ গুণ বেশি পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। আগের অর্থবছরে চার থেকে পাঁচবার পণ্য বিক্রি করা হতো। করোনা মহামারীর কারণে ২০২০-২০২১ অর্থবছর সারা বছরই পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। তাই ভর্তুকির পরিমাণও বেড়েছে।