নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: রমজান আসতে বাকি দেড় মাস। এর মধ্যে পাইকারি কাপড়ের আতুরঘর টেরিবাজারের ৮২ মার্কেটের দুই হাজারের বেশি দোকান প্রস্তুত ঈদের কাপড় বিক্রির জন্য। ঈদকে ঘিরে এসব মার্কেটে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদেশি পোশাকে ভর্তি হয়েছে প্রায় প্রতিটি দোকান। দোকানে দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পুরুষদের শেরওয়ানি, স্যুট, ব্লেজার, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, টাই, জিন্স প্যান্ট, সু-সেন্ডেল, সাফারি, প্রসাধনী সামগ্রীসহ রেডিমেড সব আইটেম। প্রায় কয়েক হাজার ডিজাইনের কাপড় আছে এই সব দোকানে। নারীদের সব ধরনের পোশাকেও পিছিয়ে নেই দোকান গুলো।
টেরীবাজারের বড় শো-রুম গুলোর মধ্যে একটি ‘পরশমনি’। কাপড়ের বর্ণনা তুলে ধরেন ক্রেতাদের কাছে ৫০ জনের অধিক কর্মী । বিভিন্ন ডিজাইনের মধ্যে ৮০ শতাংশ পোশাকই সেলোয়ার-কামিজ। যার মধ্যে ২০% ভারতীয় পোশাক ও ২০% পাকিস্তানি পোষাক। আর ৬০ শতাংশ দেশী পণ্য।
জানা যায়, বর্তমানে ভারত থেকে বৈধ পথে আমদানি কমে গেছে। অবৈধ পথে আসছে শত শত কোটি টাকার পণ্য। বিশেষ করে ঈদের বাজার সামনে রেখে চলছে রমরমা কারবার। ভারতীয় লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস থেকে শুরু করে সব বয়সীর শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, সেন্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নানারকম নামের এসব পোশাকের চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সেসব পণ্য মজুত ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। চোরাপথে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশি শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, চোরাপথে আসা পণ্য বিক্রিতে লাভ বেশি। শুল্ক ছাড়া এসব পণ্যের বাজারমূল্য অনেক কম থাকে। এ কারণে দেশি উৎপাদনমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভারতীয় পণ্যের কাছে মূল্য ও মানে দেশি পণ্য মার খাচ্ছে। এছাড়া বৈধ পথে আমদানিকারকরাও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বেশি লাভজনক হওয়ায় বৈধ আমদানির চেয়ে অবৈধ আমদানির দিকেই ঝুঁকছেন তারা। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখন থেকেই ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঈদপণ্যের মজুত শুরু করেছেন।
টেরি বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদ উপলক্ষে এ বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়েছে। ৪০ ভাগই ভারত থেকে এসেছে। এসব পণ্য বৈধ পথে এসেছে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নয়, ভারতীয় পণ্য এসেছে এলসির মাধ্যমে।
টেরিবাজার দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, মাহে রমজান উপলক্ষে কার্যকরী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়েছে। রমজান উপলক্ষে শক্তিশালী কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির দায়িত্ব থাকবে যানজট নিরসন ও হকার মুক্ত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে ক্রেতা সাধারণ যেনো পছন্দ মতো পণ্য ক্রয় করতে পারে। আমরা মাইকে পাবলিসিটি করছি যেনো কর্মচারীরা ক্রেতাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে। এখানে একটা শোরুমে গেলে সব কিছু পাওয়া যায়। আমাদের নিজস্ব সিকিউরিটি আছে সামনে আরও বাড়াবো। তাছাড়া সিএমপি থেকে তদারকির জন্য একটা স্পেশাল টিম দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বড় একটা সমস্যা টেরিবাজারের রাস্তা সরু। একটা ট্রাক আসলে আমাদের রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায় তাই চেম্বার ও খাতুনগঞ্জ মালিক সমিতির সাথে আলোচনা করে বন্দরের জেটি থেকে মালামাল নিয়ে যে ট্রাক আসবে তা যেনো জেল রোড অথবা কোতোয়ালি লিংক রোড দিয়ে আসে। তাহলে ক্রেতারা ভালো ভাবে আসতে পারবে।
তিনি ক্রেতাদের উদ্দেশে বলেন, ক্রেতারা আসুন আমাদের এখান থেকে পণ্য কিনুন, কোনো সমস্যা হলে আমাদের জানান। আমরা সমাধান করবো।
তিনি আরও বলেন, এ বাজার হতে চট্টগ্রামের সব উপজেলায় কাপড় নিয়ে যায় খুচরা দোকানিরা। পাশাপাশি যারা পোশাক তৈরি করেন, তারাও নিয়ে যান। বুটিক হাউজগুলো তাদের প্রয়োজন অনুসারে থান কাপড় নিয়ে যায়। আসন্ন ঈদ ঘিরে এক হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রস্তুতি নিয়ে আছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা। এ বাজারের বিক্রেতারা সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এখানে কোনো ধরনের অবৈধ কাপড় আসে না। তবে ভারতীয় পোশাকের চাহিদার কারণে ভারতীয় পোশাকের আধিক্য আছে।
টেরিবাজার দোকান মালিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ সভাপতি ও আহবায়ক আলহাজ্ব বেলায়েত হোসেন বলেন, রমজান মাস ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়ীক মাস। এই মাসকে সামনে রেখে সব দিক বিবেচনা করে একটা কমিটি করেছি। পরে একটা উপকমিটি করে দিবো। আমরা সমিতির ২১ জন কর্মকর্তা এই কমিটির বিভিন্ন দায়িত্বে থাকি। অনেক দেশ থেকে এ বাজারে পণ্য আসে। তবে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে এই বাজারে বেশি পণ্য আসে। তাছাড়া অনেক ব্যবসায়ী এলসির মাধ্যমে পণ্য আনে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ২শ কোটি টাকার পণ্য ইতিমধ্যে এসেছে এই বাজারে। প্রচুর পণ্য এখনও আসছে। করোনার প্রকোপ কমায় ও সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারনে বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। পরিস্থিতি আল্লাহ ভালো রাখলে সামনে ভালো বেচাকেনা হবে বলে আশা করি।
বিদেশি পণ্য আমদানি সম্পর্কে তিনি জানান, আমাদের এখানে বর্ডার নেই। টেরিবাজারে সরকারি শুল্ক ফাঁকি নিয়ে পণ্য আসে না। আমারা তৃতীয় পার্টি। আমারা ঢাকা থেকে পণ্য কিনে আনি। পণ্য কিনার মেমো আমাদের কাছে আসে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য বিক্রি বন্ধ করতে হলে আগে বর্ডারের বেড়া দিতে হবে। তাহলে চোরাপথে পণ্য আসবে না।