যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের পুলিশ বলছে, ডালাস শহরের একটি বাড়ি থেকে তারা ছয় জন বাংলাদেশির মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে ফোনকল পেয়ে ডালাসের একটি বাড়িতে গিয়ে মৃতদেহগুলো পায় তারা।
কিছুক্ষণ আগে এগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এরা সবাই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং একই পরিবারের সদস্য।
পুলিশ বলছে, পরিবারটির দুজন সদস্য, যারা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই ভাই, তারা তাদের বাবা, মা, বোন ও নানীকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছে।
পুলিশের বক্তব্য, এই দুই ভাই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ছিলো বলে ঘটনার আগে লেখা ফেসবুক নোটে উল্লেখ করেছে।
দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোটো ছেলেটি দীর্ঘ ফেসবুক নোটে তাদের বিষণ্ণতায় ভোগার ইতিহাস, হত্যার পরিকল্পনা ও ঘটনা সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়েছে।
- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ টেক্সাস এর সেক্রেটারি নাহিদা আলী বিবিসিকে বলছেন, আকস্মিক এ ঘটনায় টেক্সাসের পুরো বাংলাদেশি সম্প্রদায় হতবাক হয়ে পড়েছে।
“পরিবারটি ছিলো ছিমছাম ও শান্তিপ্রিয়। প্রতিবেশীসহ অন্যদের সহযোগিতার জন্য সুনাম ছিলো তাদের। তিনটি বাচ্চাই খুব মেধাবী ছিলো। ছোট ছেলেটি ফেসবুকে একটি নোট দিয়ে গেছে। সেখানে সে বলেছে সে ও তার ভাই বিষণ্ণতায় ভুগছিলো দীর্ঘদিন ধরে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিসেস আলী।
নাহিদা আলী বলেন, বিষণ্ণতার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলো বলে ছোট ছেলেটি তার নোটে লিখেছে, যদিও পরিবার থেকে এসব কিছু কখনো অন্যদের সাথে শেয়ার করেনি।
নিউইয়র্ক থেকে সংবাদদাতা লাবলু আনসার জানাচ্ছেন, কিছুক্ষণ আগে ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে।
এ সময় স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে যে, গত শনিবার এই হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের ধারণা।
পরিবারের ছোটো ছেলে ফেসবুকে তাদের আত্মহত্যা ও অন্যদের হত্যার ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে উল্লেখ করে স্থানীয় পুলিশ এটিকে ‘হতাশার ধারাবিবরণী’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ওই নোটে ছোটো ছেলেটি লিখেছে যে, সে ২০১৬ সাল থেকে চরম বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।
এমনকি এর জের ধরে কখনো কখনো নিজেই নিজের হাত পা কেটে স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছে সে এবং তার বড় ভাইও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।
লাবলু আনসার জানিয়েছেন, ফেসবুকে ছোটো ছেলেটি যা লিখে গেছে তাতে তারা দুই ভাই মিলেই পরিকল্পনা করেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
তারা তাদের বোনকে নিউইয়র্ক থেকে ডেকে নেয় পারিবারিক গেট টুগেদারের জন্য, আর তার নানী গত মাসে বাংলাদেশে ফেরার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ফিরতে পারেননি।
মি. আনসার জানান, পুরনো ঢাকার এই পরিবারটি আট বছর ধরে টেক্সাসে বসবাস করছিলো এবং তার আগে তারা নিউইয়র্কে থাকতো।
তাদের পরিবারের আরও সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের আছেন এবং খবর পেয়ে তারা সেখানে রওনা হয়েছেন।
আত্মহত্যাকারী দুই ভাই ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অস্টিনের শিক্ষার্থী ছিলো।
লাবলু আনসার বলছেন ফেসবুক নোটে এমনকি ছোটো ছেলেটি বর্ণনা করেছে যে কিভাবে তারা বন্দুক সংগ্রহ করেছে।
“বড়ভাই গেলেন দোকানে। বললেন যে, বাড়ির নিরাপত্তার জন্যে বন্দুক দরকার। দোকানী কয়েকটি ফরম ধরিয়ে দিলে সেখানে স্বাক্ষর করলেন ভাই। এরপর হাতে পেলাম কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি, যা দিয়ে নিজের কষ্ট এবং পরিবারের কষ্ট সহজে লাঘব করা যাবে”।
ওদিকে এ ঘটনা জানাজানির পর ভোর থেকেই সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অনেকে বাড়িটি সামনে জমায়েত হয়েছেন।
নাহিদা আলী বলছেন ময়না তদন্তের পর পুলিশের কাছ থেকে মৃতদেহ ফেরত পাওয়ার পর তাদের দাফনসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।
-বিবিসি