ঢাকা: দলিল বনিয়াদে নামজারির ব্যবস্থা শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। এ ব্যবস্থায় ক্রয়কৃত কিংবা হস্তান্তরিত ভূমির নামজারি করার জন্য এসিল্যান্ড অফিসে নামজারি আবেদনের আর প্রয়োজন হবে না। প্রাথমিকভাবে সাভার উপজেলায় এ ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশনা দিয়ে গতকাল সোমবার একটি পরিপত্র জারি করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
গতকাল মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্রয়-বিক্রয় কিংবা হস্তান্তরের পর ভূমির নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ও নামজারির (মিউটেশন) সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে গত ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপিত প্রস্তাবটি আরও কিছু নির্দেশনাসহ মন্ত্রিসভা অনুমোদন দেয়।
মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, ই-নামজারির আবেদনের মতো প্রাপ্ত দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস একত্র করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্র্তৃক স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-নামজারির জন্য মিস কেস রুজু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দলিল গ্রহীতার কাছ থেকে আলাদা করে আবেদন গ্রহণের আবশ্যকতা নেই।
নামজারি বা ই-নামজারি খতিয়ানের ভিত্তিতে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে এবং এর ভিত্তিতে মালিকানা পরিবর্তন হলে সে ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বিধান প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সাধারণভাবে প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়োজন হবে না।
এ মাসের শুরুতেই ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছিলেন, ভূমিসেবা ডিজিটাইজেশন মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সারা দেশের ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং সেল গঠনের কাজ চলছে। গত রবিবার সচিবালয়ে ভূমি সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারীর সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি এবং তার দলের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২০’ অর্জন উপলক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটাইজেশনের পর মাঠপর্যায়ের সমস্যা আর থাকবে না। সব ডিজিটাল হয়ে যাবে। সিস্টেমই তখন অনিময় করতে দেবে না। গতকাল জারি করা নির্দেশনার মাধ্যমে পুরোপুরি ডিজিটাইজেশনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল ভূমি মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতির হার ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর জাতীয় উন্নয়নের অগ্রগতির হার ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সে হিসাবে জাতীয় অগ্রগতির হারের চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের হার ১ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বেশি।
ভূমিমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আমাদের আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে। জাতিসংঘ পুরস্কারপ্রাপ্তির পর আমাদের ওপর দায়িত্ব আরও বেড়েছে। এ স্বীকৃতি ধরে রাখতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এদিকে গতকাল মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে আরও বলা হয়, জমি হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় সাব-রেজিস্ট্রার তিন কপি দলিল সম্পাদন করবেন। এর মধ্যে একটি কপি দলিল গ্রহীতা পাবেন। দ্বিতীয় কপি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংরক্ষণ করবে এবং তৃতীয় এলটি নোটিসের একটি পরিচ্ছন্ন ও পাঠযোগ্য কপি সাব-রেজিস্ট্রার সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও সার্কেল ভূমি অফিসে পাঠাবেন।
দলিলের কপি ও এলটি নোটিসের কপি ভূমি অফিসে পৌঁছানোর পর প্রচলিত বিধান অনুযায়ী নামজারির ফি ও সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করা এবং দলিল অবিকল নকল কপিসহ উপস্থিত হয়ে শুনানি গ্রহণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চার কার্যদিবসের মধ্যে সময় দিয়ে দলিল গ্রহীতাকে ই-মেইল বা মেসেজ দিতে হবে। এ ছাড়া, দলিলের কপি এবং এলটি নোটিস সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে পৌঁছানোর তারিখ থেকে পরবর্তী আট কার্যদিবসের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন নিশ্চিত করার কথা বলা আছে পরিপত্রে।
ডিজিটাল সিস্টেমের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সনদ যাচাইয়ে সহায়তার জন্য পত্র প্রেরণ ভূমি মন্ত্রণালয়ের চলমান ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক সেবার মধ্যে ই-নামজারি সিস্টেমের সঙ্গে এটুআই কর্র্তৃক পরিচালিত উত্তরাধিকার সনদ (যা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে চলমান) সিস্টেম দেশের সব স্থানীয় সরকার কর্র্তৃপক্ষ কর্র্তৃক ব্যবহারের লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক আজ একটি পত্র প্রেরণ করা হয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের চলমান ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক সেবার হ্যাকিং প্রতিরোধে ডিজিটাল সাইবার নিরাপত্তা রক্ষার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে জননিরাপত্তা বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক আরেকটি পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
-দেশ রূপান্তর