Home কৃষি জৈব পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষে সফলতা

জৈব পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষে সফলতা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

যশোর: অর্গানিক ড্রাগন চাষ করে সাড়া ফেলেছেন যশোর সদর উপজেলার নারী উদ্যোক্তা চম্পা বেগম। নানা বাধা উপেক্ষা করে যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের বানিয়ালী গ্রামে ২০শতাংশ জমিতে জৈব পদ্ধতিতে করেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। চলতি বছর সেই বাগানে ধরেছে গোলাপি রঙের মিষ্টি ড্রাগন ফল। বর্তমানে তার বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সেই সাথে তাকে দেখে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধও হয়েছেন অনেকে।

২০২২ সালের শুরুর কথা অসুস্থ স্বামী আর সন্তান নিয়ে কঠিন সময় যাচ্ছিলো চম্পা বেগমের। বাড়িতে হাঁস-মুরগি আর গরু-ছাগল পালন করে কোন রকমে দিন পার করছিলেন তিনি। মাস ছয়েক পর জেসিএফ-র ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের একটি উঠান বৈঠকে অংশ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হওয়ার।১০শতাংশ জমিতে গড়ে তোলেন অর্গানিক ড্রাগন ফলের বাগান।

চম্পা বেগম জানান, পরিবার ও এলাকার মানুষের বিরোধিতা সত্ত্বেও শুরুতে ১০ শতাংশ জমিতে ৫১২টি ড্রাগন চারা রোপণ করেন তিনি। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে কোনরকম রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে শুরু করেন বাগান পরিচর্যা। মাস ছয়েক পরেই ফল আসতে শুরু করে চম্পার বাগানে। বছর শেষে খরচ উঠে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেন চম্পা। বর্তমানে ১ বিঘার পরিপূর্ণ অর্গানিক ড্রাগন বাগানের মালিক তিনি।

চম্পা বেগম বলেন, আমাদের এলাকায় আমি প্রথম কৃষি অফিসের ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্প ও ডিজিটাল ইনফরমেশনের সহায়তায় ড্রাগন ফল চাষ শুরু করি এবং নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পাই। যা আমাকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করেছে। আমি বর্তমানে মানুষকে নিরাপদ ও পুষ্টিকর ড্রাগন ফল খাওয়াতে পারছি। এটাই আমার তৃপ্তি। যখন আমি বাগান করি এলাকার লোক অনেকেই বলেছিলো- মহিলা মানুষ মাঠে-ঘাটে যাওয়া ঠিক না। কিন্তু আমি সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আমার বাগান দেখতে আসে। আমার দেখাদেখি অনেকে এখন এই এলাকায় বাগান করছেন। বিশেষ করে মহিলারা বাগান করেছেন। এ জন্যে আমি স্যারদের ধন্যবাদ দিই।

একটি গাছ পরিপক্ক হতে এক-দুই বছর সময় লাগে। পরিপক্ক একটি গাছে ২৫ থেকে ৩০টি ড্রাগন ফল ধরে। প্রতিবছর জুন থেকে নভেম্বর এই ছয় মাস ফল পাওয়া যায়। প্রতি কেজি স্বাভাবিক ফলের বর্তমান বাজারমূল্য ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কিন্তু অর্গানিক পদ্ধতির এই ফলের দাম ৩৫০-৪০০ টাকা।

চম্পা বেগম আরও জানান, ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে বাগান শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তার বাগানের ২০ শতাংশ জমিতে গোলাপি রঙের ড্রাগন ফল শোভা পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাগান করার খরচ উঠে গেছে তার। বাকি ফল বিক্রি করে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি। বাগান ঠিকঠাক পরিচর্যা করলে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব বলেও জানান চম্পা।

চম্পা বেগমের ড্রাগন বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেকে। এদের মধ্যে বানিয়ালী গ্রামের ফুলিমা বেগম একজন। তিনি বলেন, চম্পা আপা যদি পারে আমি কেন পারবো না। আপাকে দেখে আমিও ড্রাগনের চাষ শুরু করিছি। আমি ২০০ চারা রোপণ করিছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ফল পাবো।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন (জেসিএফ)-র ফিড দ্যা ফিউচার বাংলাদেশ নিউট্রিশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের এরিয়া স্পেশালিস্ট আসাদুজ্জামান সুমন জানান, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিতে যশোর এবং খুলনার বিভিন্ন উপজেলায় তাদের নানামুখী কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এরমধ্যে যশোরে নিরাপদ ফল চাষ নিশ্চিতে ফলচাষিদের বিভিন্ন জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহারে সহায়তা করছেন তারা। এরমধ্যে কেঁচো কম্পোস্ট সার , সেক্স ফেরোমন ফাঁদ, মালচিং পদ্ধতি অন্যতম। যার ব্যবহার করা হয়েছে চম্পা বেগমের ড্রাগন বাগানে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আবু তালহা বলেন, যশোরের মাটি ড্রাগন চাষের জন্যে খুবই উপযোগী। এটি ক্যাকটাস জাতীয় মেক্সিকান একটি ফল। এই ফল বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী।