বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহ: লাভজনক হওয়ায় ড্রাগন চাষ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। এমন কি ফলজ ও বনজ গাছ সাবাড় করে সেই জমিতে ড্রাগন আবাদ হচ্ছে। বাড়ির উঠানেও ড্রাগন লাগানো হয়েছে।
কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় প্রচুর ড্রাগন ক্ষেত। মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর, আলামপুর, মালাধরপুর, বিদ্যাধরপুর, আদমপুর গ্রামে ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ একেবারে কমে গেছে। একই অবস্থা কোটচাঁদপুরেও।
কৃষকরা কেন ঝুঁকে পড়েছেন ড্রাগন চাষে? এ প্রসঙ্গে এক কৃষক বিল্লাল হোসেন বললেন,‘আমি ও আমার ভাইপো তরিকুল ইসলাম রিয়েল ৩৫ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছি। এসব জমিতে আগে ধান, বাদাম ভূট্টাসহ সবজির আবাদ করা হত। এ সকল ফসলের আবাদ খরচ ঠিকমত ওঠে না। এক বিঘা জমিতে ওই সকল ফসল চাষ করে বছরে পাওয়া যেত ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কৃষি শ্রমিক, সার, কীটনাষকসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে খুব একটা লাভ থাকে না। অথচ ১ বিঘা জমির ড্রাগন বছরে ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা বিক্রি করা যায়। খরচ বাদ দিলে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লাভ থাকে।’
একজন চাষী জানান, প্রায় ৮ বছর আগে চারা সংগ্রহ করে দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন আবাদ করেন। এক বছরের মাথায় সে সময় ওই জমির ফসল বিক্রি করেন ১২ লাখ টাকা। পরের বছর তারা আরও পাঁচ বিঘা জমিতে্ আবাদ করেন। তাদের ড্রাগন চাষে অল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া দেখে ওই এলাকাতে শুরু হয় ড্রাগন চাষের প্রতিযোগিতা।
মহেশপুরের গৌরীনাথপুর গ্রামের মাঠের চারপাশে ড্রাগনের ক্ষেত । পাশে দু’একটা ফাঁকা জায়গা থাকলেও সেখানেও হচ্ছে ড্রাগন আবাদ। কেউ কেউ কমলা লেবু, মালটা, পেয়ারা, আম বাগান কেটে সেই জমিতে আবাদ করছেন ড্রাগন। সব বাগান থেকে চাহিদা অনুযায়ী ফল বা অর্থ না পাওয়ায় সেখানে তারা ড্রাগন চাষে নামছেন।
ড্রাগন ক্ষেতে কাজ করছিলেন আব্দুর জব্বার। জানালেন ‘দু’বছর আগেও এ মাঠে চাষ হত ধান, বাদাম, ভূট্টাসহ নানাবিধ ফসল। এখন সে ফসল আর নেই বললেই চলে। এখন নীচু জমিগুলোতে সামান্য কিছু ধান চাষ হচ্ছে। বাকী সব জমিতে ড্রাগন।’
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান বলেন, কোটচাঁদপুরেও দিনে দিনে ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে কোটচাঁদপুরে ৩শ’ হেক্টরের বেশি জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। আশংকার বিষয় হচ্ছে ধানি জমিসহ ফলজ ও বনজ সম্পদ ধ্বংস করে ড্রাগন চাষ করছেন চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে তারা লাভবান হচ্ছে বেশি। যে কারণে অন্যান্য চাষে আগ্রহ কম।’
তিনি বলেন, যেহেতু ধানি জমি কমে যাচ্ছে সেহেতু ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগামীতে ধান উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আরও উচ্চ ফলনশীল ধান চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ড্রাগনের মত এ ধরণের ফলের চাষ ব্যাপকহারে হলেও প্রাকৃতিক নিয়মে এক সময় চাষির ধানসহ পূর্বের অন্যান্য ফসল চাষে তারা আবারও ফিরে আসবে।’
ড্রাগন ফল মূলত আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটি ফল যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ড্রাগন ফলের গাছ ক্যাকটাস জাতীয়। এই গাছের কোন পাতা নেই। গাছ সাধারনত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় ,শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির । ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম । একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই ফলের পুষ্টিগুণও প্রচুর | ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফলে ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন ,ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে। এই ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।