বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: গ্যাস, বিদ্যুতের পর পানির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ জানালো কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। মঙ্গলবার ক্যাব-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘পানির অন্যায্য মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের প্রতিবাদ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় সভায় এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
ক্যাব বলেছে, ওয়াসার অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি-অপচয়ের দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা থেকেই ওয়াসায় চলে মূল্য বৃদ্ধির খেলা। অথচ ভোক্তাদের তা বাধ্য হয়েই সহ্য করতে হ্য়। একটা পক্ষ হওয়া সত্ত্বেও একতরফা চাপিয়ে দেয়ার সময় ভোক্তাদের এনিয়ে ক্থা বলার কোন জায়গা নেই।
গত ১০ বছরে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে ৩ গুণ। এরমধ্যেই বিদ্যুতের দাম ৬৭% বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর গ্যাসের অভাবে জ্বলানী তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৯০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। জ্বালানির সঙ্কটে এলএনজি এনে তার দাম সমন্বয় করায় বিদ্যুতে খরচ আরো বাড়বে। যা বিবেচনায় রেখে ৬৭% বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আবার দেশীয় কোম্পানীর গ্যাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড এবং সিলেট গ্যাস ফিল্ড এসময় ৫০% দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
একদিকে ডিজেলের দাম বাড়ায় দেশের সকল ক্ষেত্রেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। তার ওপরে আবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার সাথে সাথে দেশের সকল দ্রব্য মূল্যে আরও একদফা উল্লম্ফন ঘটতে শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমুল্যের বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালানো যখন অসম্ভব। তখন পরিবার প্রধানরা পরিবার পরিচালনার জন্য, অধিক আয়ের জন্য দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। করোনার প্রত্যক্ষ প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছে বেসরকারি খাতের বিরাট এক অংশ।
সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ের চাকরিজীবীরা পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। মহাবিপদে আজ দেশের সাধারন জনগন! ঢাকা ওয়াসা বোধকরি ভেবেছে, এইতো সময়। করোনা মহামারির সময়েও ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের এপ্রিলে। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরেক দফা বাড়ে দাম। এ দুই দফায় আবাসিকে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বেড়েছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ)। বাণিজ্যিকে বেড়েছিল ৪ টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)।
জনগণকে একটি অতিপ্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা আবারও ২০ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে চায় ঘাটতির টাকা তুলতে। অথচ সংস্থাটির অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করেই ঘাটতির টাকা সমন্বয় করা সম্ভব,মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না।
তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দামবৃদ্ধিকে কারণ দেখিয়ে ঢাকা ওয়াসা প্রতিহাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা দেখিয়ে বলেছে তারা ১০ টাকা কমে ১৫ টাকায় বিক্রি করছে। সরকার এই টাকা ভর্তূকি দেয়, যা আর দিতে চায় না।
এ অবস্থায় এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান সংস্থাটির অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি-অপচয়ের সব দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভর্তুকি কমানোর পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্থা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।“
কিন্তু ঢাকা ওয়াসা হচ্ছে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, লাভ বা বাণিজ্য এর উদ্দেশ্য নয়। অথচ সেবার চেয়ে বানিজ্যের দিকেই এর নজর এখন বেশী। দেশে বিভাগীয় শহর গুলোতে আরও ৬টি ওয়াসা আছে। তাদের পানির দাম ঢাকা ওয়াসার চেয়ে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। হাজার লিটারের ইউনিট প্রতি খরচ এত বেশী না বলেই তারা পারছে।
প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি এবং তার মূল্য শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই বহন করতে হয়। ঢাকা ওয়াসার ১১টি দুদক চিহ্নিত দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থের অপচয় নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন মাথাব্যথা দেখায়নি ওয়াসা।
নতুন আরেক খাত বের করা হচ্ছে, বিত্তবান আর সাধারণ মানুষের বসতি এলাকার শ্রেণীভেদ করে পানির দাম নির্ধারণের মাধ্যমে। যেন উচ্চবিত্তের পশ এলাকায় সাধারণের এবং সাধারণের আবাসিক এলাকায় বিত্তশালীদের থাকতে নেই! নাকি নতুন লেনদেনে ভোক্তার শ্রেণীভেদ পরিবর্তনের করে বিলে হেরফের করার ক্ষমতা অর্জন করাই এর লক্ষ্য এখনও বোঝার সময় হয়নি।
এক কথায় ওয়াসার অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি-অপচয়ের দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই ওয়াসায় চলে এই মূল্য বৃদ্ধির খেলা। অথচ ভোক্তাদের তা বাধ্য হয়েই সহ্য করতে হ্য়। একটা পক্ষ হওয়া সত্ত্বেও একতরফা চাপিয়ে দেয়ার সময় ভোক্তাদের এনিয়ে ক্থা বলার কোন জায়গা নেই।