বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
চোখের সামনে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছিল বাড়িগুলি। কেঁপে উঠছিল পায়ের তলার মাটি । কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে নাসার আল ওয়াকারের মাথায় তখন জমা হয়েছে একরাশ দুশ্চিন্তা। বাড়িতে রয়েছে তাঁর স্ত্রী ও ছোট্ট ছোট্ট সন্তানরা। তাঁর বাড়ি ভেঙে পড়েনি তো… বেঁচে আছে তো তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা… সেই চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়ির সামনে গিয়ে দেখেন, কোথায় বাড়ি, এতো এক ধ্বংসস্তূপ। তার নীচেই চাপা পড়েছে তাঁর স্ত্রী-সন্তানরা। কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় বসে পড়ে ওয়াকা। আল্লাহর কাছে শুধু প্রার্থনা করছিলেন, ‘দয়া করে অন্তত একজন সন্তানকে বাঁচিয়ে দাও…’!
ভগবান হয়তো শুনেছেন ওয়াকারের কান্না। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত সিরিয়ার জান্দারিস শহরে ওয়াকারের ভাঙা বাড়ির ইট-কাঠ সরিয়ে উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা দেখতে পান সেখানে এখনও দুটি প্রাণ বেঁচে আছে। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে উঁকি মারছে চোখগুলো। ওয়াকা পেলেন তাঁর দুই সন্তানকে! কিন্তু স্ত্রী ও বাকি চার সন্তান, না তাঁরা আর বেঁচে নেই।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর চারটে নাগাদ তুরস্ক (Turkey Earthquake) ও সিরিয়া দুলে উঠেছিল ভূমিকম্পে। নিমেষে এক একটা বড় বড় শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায়। চোখ যতদূর যায়, ততদূর শুধুই ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলা। সেই ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে এক একটা লাশ টেনে বের করে আনছে উদ্ধারকারী দল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তুরস্ক। সিরিয়ার একটা অংশে সেই প্রভাব পড়েছে। এই দেশে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ছুঁইছুঁই।
এত লাশের ভিড়ের মধ্যে কোথাও কোথাও এখনও প্রাণ আছে। ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়েও বেঁচে আছে মানুষ। তাঁদের একে একে উদ্ধার করছে উদ্ধারকারী দল। ওয়াকারের দুই সন্তানও এভাবেই বেঁচে ফিরল বাবার কোলে।
ওয়াকা দেখেছিল সিরিয়ার যুদ্ধ। গোলাগুলির শব্দে কান পাতা দায় ছিল। সেই স্মৃতিই যেন সোমবার ফের একবার তাড়া করেছিল ওয়াকাকে। প্রচুর মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেসময়। ভূমিকম্পও যেন তেমনই প্রাণ কেড়ে নিল হাজার হাজার মানুষের। ওয়াকা বলেন, ‘আমার চোখের সামনে যখন বাড়ি ভেঙে পড়ছে তখন ঈশ্বরকে বলেছিলাম দয়া করে অন্তত একটা সন্তানকে বাঁচিয়ে দিও…।’
ভূমিকম্পের পর বাড়ির ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াকা চিৎকার করে তাঁর ছেলে-মেয়েদের নাম ধরে ডেকেছিলেন। ‘ফয়সাল, মহসিন, মনসুর…’, কোনও সাড়া মেলেনি। পরে দেখেন, উদ্ধারকারীরা একে একে তাঁর ছেলে-মেয়েদের নিথর দেহ বের করে আনেন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে।