ভোলা থেকে মহিউদ্দিন: মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে ছোট হয়ে যাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রুপালী দ্বীপ মনপুরা।
৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ দ্বীপ উপজেলাটি ভোলা জেলার মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। চারপাশে মেঘনা নদী বেষ্টিত সবুজ সমারোহে ঘেরা। দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিদিন রাক্ষসী মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে বসত ভিটা ফসলি জমি হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। হাজার হাজার একর ফসলী জমি আজ নদীর গর্ভে বিলীন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে নতুন জেগে উঠা চর কিংবা বেড়ীর ডালে।
মেঘনার ভাঙ্গনে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন স্থান, বাজার, মসজিদ , মন্দিরসহ কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পর্যটনের আকর্ষনীয় স্থান মনপুরা ফিসারিজ , নাইবেরহাট বাজার, হাজির হাট ইউনিয়নের সোনারচর ,চরজ্ঞান, দাসের হাট, মনপুরা ইউনিয়নের পুর্বকুলাগাজী তালুক, সীতাকুন্ড, ঈশ্বরগঞ্জ গ্রাম, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের মাষ্টারহাট বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশ, দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের রহমানপুর গ্রাম নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে ৪টি ইউনিয়ন কেবলই ছোট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙ্গতে থাকলে মনপুরা হয়তো কোন একসময়ে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাজির হাট ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার সংলগ্ন পুর্ব-পশ্চিম পাশে মেঘনার ভাঙ্গনে কেবলই ভিতরে ঢুকছে। নাইবেরহাট , সোনারচর ও চরজ্ঞান মুক্তিযোদ্ধা আঃ লতিফ ভূইয়া বাড়ীসহ অধিকাংশ গ্রাম মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিড়পাড়, মাছুয়াখালি, কাচারির ডগি,সম্পুর্ন এবং ঈশ্বরগঞ্জ মৌজার অধিকাংশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উত্তর সাকুািচয়া ইউনিয়নের মাষ্টার হাট বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মাষ্টার হাট বাজার সংলগ্ন ব্রিজটি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। যেকোন সময় ব্রিজটি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন -পুর্ব পাশ ও রহমানপুর গ্রাম মেঘনার ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে।
এ ব্যাপারে হাজির হাট ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ নিজামউদ্দিন হাওলাদার এ প্রতিনিধি কে জানান, মনপুরাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি’র সাথে আলাপ করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করা হবে। নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষার জন্য জনগনকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করে যাবো।
এব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরী বলেন, মেঘনার ভাঙ্গনে মনপুরা ছোট হয়ে যাচ্ছে। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যে উত্তর মাথায় নদীর তীর রক্ষা প্রকল্প কাজ আমরা শেষ করেছি। উত্তর মাথায় আমরা ব্লক ও ড্যাম্পিং করেছি। মেঘনার ভাঙ্গন রোধে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি’র সাথে পরামর্শ করে কার্যকর ব্যাবস্থা গ্রহন করব। নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধগুলো নির্মান করেছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপকুলীয় এলাকায় স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য “ভোলা জেলার মুজিব নগর ও মনপুরা উপজেলা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ পুর্নবাসন নিস্কাসন ব্যাবস্থার উন্নয়ন ও তীর সংরক্ষন ”নামে ১১৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছি। প্রকল্পটি যাছাই-বাছাই শেষে প্লানিং কমিশনে যাবে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই স্থায়ীভাবে নদীভাঙ্গনের হাত থেকে মনপুরাকে রক্ষা করতে সম্ভব হবে।