বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
তিন কাল গিয়ে যাঁদের এক কালে ঠেকেছে, তাঁরা কি ফেলনা? সমাজে, পরিবারে তাঁরা কি শুধুই ‘বোঝা’? না, তা নয়। তিন কালের সঞ্চিত সমস্ত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবার ওই এক কালে এসে ভাগ করে নেবেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দাদু-দিদারা। প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে দাদু-দিদা ক্লাব চালু করছে সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের নাম আনন্দধারা । এই প্রকল্পের মাধ্যমেই ষাট বছরের বেশি বয়স্ক নাগরিকদের নিয়ে প্রায় ৬ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করা হবে । সেই গোষ্ঠীর নাম হবে ‘দাদু-দিদা ক্লাব’ ।
কী করবেন এই ক্লাবের প্রবীণ সদস্যরা ?
সরকারের ভাবনা অনুযায়ী, দাদু-দিদা ক্লাবে দাদু, দিদাদের কাছে গল্প শুনতে আসবে তরুণ প্রজন্ম। রূপকথা-রাজপুত্র-দৈত্য-দানবের গল্প নয়। প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে জীবনের পাঠ নেবে তাঁরা। এত বছর ধরে তাঁরা যেসব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন জীবনের কাছ থেকে তাই ভাগ করে নেবেন ছোটদের সঙ্গে, যা ছোটদের বড় হয়ে ওঠার পথে কাজে লাগবে। আধুনিকতার দিকে ধাপে ধাপে যত এগিয়েছে সভ্যতা, ততই যেন ‘ব্যাকডেটেড’ হয়ে গেছেন পুরনো মানুষগুলো। কিন্তু ওই, পুরনো চাল যে ভাতে বাড়ে এই অমোঘ সত্য তো সকলের জানা। তাই জীবনের মণিকোঠা থেকে সঞ্চয় করা অভিজ্ঞতা দিয়ে তরুণ প্রজন্মের আগামীকে আরও উজ্জ্বল করে দেবেন দাদু-দিদা ক্লাব, সেই ভাবনা থেকেই আনন্দধারা প্রকল্পের আত্মপ্রকাশ।
আজকাল হামেশাই শোনা যায়, সম্পর্কের টানাপড়েন কিংবা কর্মক্ষেত্রে হতাশায় ভুগে জীবনের লড়াইয়ে সহজেই হার মেনে নিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। অল্পতেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তারা। আবার বয়স্কদের প্রধান সমস্যা এখন একাকীত্ব। ছেলেমেয়ে কিংবা আপনজনদের সঙ্গ ছাড়া শেষ জীবন বিস্বাদ ঠেকছে। ষাটোর্ধ্বদের সেই একাকীত্ব থেকে মুক্তি এনে দেবে এই দাদু-দিদা ক্লাব। আবার তা বিভ্রান্ত তরুণ-তরুণীদের দিশা দেখাতেও পারবে। বাবা-মা বা নিজের পরিবারের কাছে যে কথা ভাগ করে নিতে সংকোচ করে ছেলেমেয়েরা, সেকথা নির্দ্বিধায় তারা বলতে পারবে অচেনা দাদু বা দিদার কাছে। তাঁদের থেকে পাবে মূল্যবান পরামর্শ, উপদেশ।
দাদু-দিদা ক্লাবের সদস্যরা নিজেদের এলাকায় সপ্তাহে অন্তত দিন দুয়েক বসবেন তাঁদের গল্পের ঝুলি নিয়ে। সেখানেই গিয়ে চাইলে সমস্যার কথা জানাতে পারবেন যে কেউ। উপদেশ চাইতে পারবেন বয়স্ক নাগরিকদের থেকে। ঘণ্টাদুয়েক চলবে এই আড্ডার আসর।
কিন্তু দাদু-দিদারা তো আর মনোবিদ নন, যে যে যা সমস্যা নিয়ে আসবে তার সমাধান বাতলে দেবেন! কীভাবে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলতে হবে সরকারের তরফে তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে এই সমস্ত বয়স্ক নাগরিকদের। হেল্প এজ ইন্ডিয়া এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।