Home Third Lead নতুন রূপে জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর

নতুন রূপে জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর

*বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১১বছরের শিশুর তৈরি করা দেয়ালিকা


নাজমুল হোসেন

চট্টগ্রাম: নতুন রূপ নিয়ে ফিরেছে এশিয়া মহাদেশের অন্যতম আগ্রাবাদ জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর।

সরেজমিনে দেখা যায়, জাদুঘরের মূল ফটক লাগোয়া একটি টিকিট কাউন্টার চালু হয়েছে। জাদুঘরটিতে নতুন করে লুসাইদের পোশাক, নেত্রকোণার হাজংদের বিভিন্ন দ্রব্যাদি ও কয়েকটি নৃগোষ্ঠীর জীবন ধারা তুলে ধরা হয়েছে।

আলাদাভাবে বঙ্গবন্ধু কর্নার সাজানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর  ১০০ ছবি সম্বলিত দেয়ালিকা ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া জাতির জনকের সময়রেখা দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে । দেশের মানচিত্র সম্বলিত ছবিকে নতুন ভাবে দেওয়া হয়েছে।
আরো রয়েছে, ভারতের কয়েকটি জাতিগোষ্ঠী, জার্মানির বার্লিন প্রাচীরের টুকরো, কিরগিজস্তান, অস্ট্রেলিয়া জাতিগোষ্ঠীর কিছু নিদর্শনা।

১ দশমিক ৩৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত জাদুঘরটিতে মোট ১১টি কক্ষ । এক নম্বর গ্যালারির প্রথম কক্ষে রয়েছে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, জীবনযাপনের বিভিন্ন চিত্র ও নমুনা। দ্বিতীয় কক্ষে উপস্থাপন করা আছে পাকিস্তানের পাঠান, পাঞ্জাবসহ চারটি জাতির পোশাক, হস্তশিল্প, অস্ত্র, বাদ্যযন্ত্রের নমুনা। জাদুঘরের কেন্দ্রীয় গ্যালারিতে রয়েছে বিভিন্ন জাতির ব্যবহৃত অলংকারের নিদর্শন। বাকি কক্ষগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীকে তুলে ধরা হয়েছে।

বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ৩ হাজার ২শ এর মতো নিদর্শন আছে জাদুঘরটিতে। জাতিগোষ্ঠীর নিদর্শন আলোকচিত্র, মডেল, নমুনা গুলো নতুন ভাবে পলিশ করা হয়েছে। 

জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, জাদুঘর আধুনিকায়নের জন্য ২০১৭ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর তিন বছর মেয়াদি ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রামের জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের প্রদর্শনী উন্নয়ন, সংগ্রহ বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন’ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পের আওতায় জাদুঘরের মূল ফটকের ডানে একটি টিকিট কাউন্টার ও বামে একটি স্যুভেনির শপ (দোকান) নির্মাণ করা হয়েছে। জাদুঘরের ছাদ সংস্কার, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা সংযোজন ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য একটি বড় জেনারেটরও কেনা হয়েছে। এ ছাড়া একটি দোতলা অফিস ভবন ও ডরমিটরি নির্মাণ করা হয়।

২০১৭ সালে ডিসেম্বরে জাদুঘরটির সামনের বাগান দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এতে জাদুঘরে দর্শনার্থী আসার সংখ্যাও বেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন ৩শ করে দর্শনার্থী জাদুঘরে আসছেন। শুক্রবার দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা বাড়ে।

ড. আহমেদ আবদুল্লাহ

জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, বাঙালি, চাকমা, মারমা, মুরং, সাঁওতাল, খাসিয়া, গারো, চাক, পালিয়া, কোচ, হদি, চাম্পুরা, খুমি, খ্যাংসহ বিভিন্ন জাতির সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শনা গুলোকে পালিশ করা হয়েছে। কয়েকটি নির্দেশনার পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম। বিদেশি দর্শনার্থীরাও আসতে পারছে না। ফেব্রুয়ারি মাসে দেশী পর্যটক এসেছে  ৩০৯৪, বিদেশি পর্যটক ৮ জন, শিশু ২৯০ জন ও শিক্ষার্থী (মাধ্যমিক স্তর) এসেছে ৫৬২ জন।  এর মাধ্যমে আয় হয়েছিলো ৬৬ হাজার ১শ ৯০টাকা।

জানা যায়, যে পরিমাণ লোকবল থাকা প্রয়োজন তা নেই জাদুঘরটিতে। ১ম শ্রেণির পদ ৩ টি, ৩য় শ্রেণির পদ ১২ টি ও ৪র্থ শ্রেণির পদ ১৩ টি। এর মধ্যে ৩য় শ্রেণির পদ খালি ৬ টি ও ৪র্থ শ্রেণির ১টি। ১৯৬৫ সালে নির্মিত জাদুঘরটি ১৯৭৪ সালে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়। বাঙালি জাতিসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন, সাংস্কৃতিক আচার, পোশাক, অলংকারের নিদর্শন রয়েছে এতে। প্রবেশ মূল্য দেশি দর্শনার্থীর জন্য ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থী ১শ টাকা, বিদেশী দর্শনার্থীর জন্য ২শ টাকা, মাধ্যমিক স্তর শিক্ষার্থীদের জন্য ৫ টাকা। ৫ বছর পর্যন্ত শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফ্রী।