Home First Lead নীল জলে জেগে উঠা সবুজ ভাসান চর এখন গোলাপী শহর

নীল জলে জেগে উঠা সবুজ ভাসান চর এখন গোলাপী শহর

ভাসান চরে গড়ে তোলা আবাসন
 

 

সালেহ নোমান

ভাসান চর থেকে ফিরে

বঙ্গোপসাগরের নীল জলে জেগে উঠা সবুজ ভাসান চর  এখন গোলাপী শহর। গোলাপী ছাউনির এই আবাসন দেশে নির্মিত সবচেয়ে বড় আশ্রায়ন প্রকল্প, যেখানে রাখা হয়েছে জীবন যাপনের আধুনিক সব সুবিধা। বাস্তুচ্যূত মিয়ানমারের এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য নির্মিত এই বসতিতে আছে, প্রশস্ত রাস্তা, প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ সিস্টেম, বিদ্যুত এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। সেই সাথে আছে দেশে প্রথম বারের মত ’স্কিন ব্রেক ওয়াটার সিস্টেমের ভাঙ্গন প্রতিরোধ ব্যবস্থাও। সব মিলয়ে বাসিন্দাদের স্বাগত অপেক্ষায় একটি আধুনিক নগরী।

চট্টগ্রাম থেকে ৫১ কিলোমিটার আর নোয়াখালি থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বের ভাসান চরে প্রায় ৩০৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাত্র দুই বছরের মধ্যে নির্মিত হয়েছে যা নিশ্চিতভাবে সরকারের সক্ষমতার প্রমাণ বহন করে।

এই আবাসন প্রকল্প ঘিরে ইতোমধ্যে সেখানে গড়ে উঠতে শুরু বাজারসহ কর্মসংস্থানের নানা আয়োজন। এতে আশার সঞ্চার হয়েছে, দূর্গম চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে।

এই রকম একজন নিকটবর্তি দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের বেকার যুবক আরিফ হোসেন ভাসান চরে এসে নিশ্চিত ভবিষ্যতের ঠিকানা খুজে নিয়েছেন।

আরিফ বলেন, দুই বছর আগে এখানে এসেছিলাম একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে কাজ করার জন্য। কাজ শেষ করে কয়েক মাস আগে একটি দোকান চালু করেছি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এখানে দোকান করবো।

“বেড়ী বাধ এবং স্লুইস গেইট থাকায় বিগত বর্ষা মওসুমে চরের অভ্যন্তরে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেনি বলে জানান আরিফ।

ভাসান চরে ১৩ কিলোমিটার বেড়ি বাধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাধে ১৫টি স্লুইস গেইট বসানো হয়েছে।জোয়ারের সময় গেইট বন্ধ রাখলে পানি প্রবেশ করতে পারেনা।

এক সময় জলদস্যূদের আখড়া দূর্গম ভাসান চর সংলগ্ন সমুদ্র  মাছের একটি বিচরন ক্ষেত্র। আইন- শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এখন নিশ্চিন্তে মাছ শিকার করা যাচ্ছে বলে জানালেন মৎস্যজীবি আলা উদ্দিন।

 

সন্দ্বীপের এই মৎস্যজীবি আলাউদ্দিন বলেন, এক সময় জলদস্যূদের ভয়ে চরের আশপাশে মাছ শিকার করা যেতোনা।এখন পুরো এলাকায় নির্ভয়ে জাল দেয়া যাচ্ছে।

ভাসান চরের বাসিন্দাদের জন্য নির্মিত প্রতিটি ঘরে দেয়া হয়েছে সৌর বিদ্যুত।থাকছে শিক্ষা- চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। পাশাপাশি, বৃষ্টি ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের পরিকল্পিত আয়োজন আবাসন প্রকল্পটিকে দিয়েছে আধুনিকতার ছোয়া।

তবে,মূল ভূখন্ডের সাথে যাতায়তের উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভাসান চরে বিপণনের কাজে আসা একটি বহুজাতিক কোম্পানীর কর্মকর্তা ওয়াহিদ পারভেজ।

ভাসান চরকে সমুদ্রের ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য বৃটিশ পরমর্শক ও চীনা প্রকৌশলীদের সহায়তায় দেশে প্রথমবারের মত আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ’স্ক্রীন ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ’ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, যা সেখানে সরকারি কর্মযজ্ঞের একটি উল্লেখ উদাহরণ।

স্ক্রীন ব্রেকওয়াটার বড় ধরনের সামুদ্রিক ঢেউ থেকে চরটিকে রক্ষা করছে। চরের ভাঙ্গন প্রবন এলাকায় ব্রেক ওয়াটার ছাড়াও পাথর

নোয়াখালির জেলা প্রশাসক তন্ময় দাশ জানিয়েছেন, অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় এখন সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপর জোর দেয়া হবে।

তিনি জানান সেখানে হাঁস-মুরগি, পশু পালন এবং মাছ চাষের প্রচুর সম্ভাবনা আছে।

ভাসান চর প্রকল্পে বর্তমানে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভাসান চর পরিনত হতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে।

ইতোমধ্যে ভাসান চরকে একটি আলাদা থানা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে এখন থানার জন্য ভবন নির্মাণ, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভবন ও আবাসান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাড়ানো হচ্ছে চরের চারপাশে নির্মিত বেড়ি বাঁধের উচ্চতাও।