বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: শীতের শেষে বসন্তের এই সময়ে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নানা রকমের ব্যবসা থাকে জমজমাট। হোটেল, পরিবহন, বিপণি বিতানগুলোর কর্মিদের সময় কাটে নিদারুন ব্যস্ততায়। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। খুব সংকটকাল যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি হোটেল-মোটেলে। দেশি-বিদেশি অতিথি নেই। ইতিপূর্বে করা রিজার্ভেশন বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, ঢাকা, সিলেট সর্বত্র কমবেশি একই চিত্র।
কয়েকটি হোটেলের নির্বাহীরা জানালেন, তারকা হোটেলগুলোর বড় ব্যবসা হয় এয়ারলাইন্সের ক্রুদের নিয়ে। ফ্লাইট অপারেশন ও ভিসা স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে সেটা নেই। বিদেশি অতিথি নেই। নেই দেশি অতিথিও। বায়িং হাউসের কর্মকর্তা, এনজিও কর্মকর্তারা আসেন না। সেমিনার এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য যেসব বুকিং ছিল সব বাতিল হয়েছে।
আরও জানালেন, জানুয়ারি থেকে দুরবস্থা শুরু হয়েছে। তবে, খুব খারাপ পরিস্থিতি ফেব্রুয়ারি থেকে। মার্চে এসে একেবারে সংকটাপন্ন। অতীতের লাগাতার হরতাল, ধর্মঘট, অবরোধের সময়েও এমন ভয়াবহ অবস্থা হয়নি বলে জানান বান্দরবান পার্বত্য শহরের এক হোটেল মালিক। জানান, বছরের এ সময়টাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয়। এবারে এমন দিনকাল যে দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় নির্বাহ করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের এক তারকা হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিজনেসটুডে২৪কে জানান, ভয়াবহ রকমের সংকটে তাদের ব্যবসা। একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে অতিথি। ৫০ শতাংশের বেশি খালি তাদের স্যুটসমূহ। রেস্টুরেন্ট পরিচালনা দায় হয়ে পড়েছে। অনুরূপ পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন ঢাকা, সিলেট, কক্সবাজার, রাঙামাটির বিভিন্ন হোটেলের নির্বাহীরা। অতিথি কমে গেছে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ।
সিলেটের গ্র্যান্ড সুরমার সিইও এমরান হোসেন বললেন, বিশ্বব্যাপী চলমান বিপর্যয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে হসপিটালিটি ব্যবসার।
পর্যটন বিষয়ক ম্যাগাজিন ট্যুরিজম সম্পাদক কাজি ওয়াহিদুল আলম বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধিকে এ প্রসঙ্গে জানান, বিরাজমান করোনাভাইরাস ত্রাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাত পর্যটন এবং এর সাথে জড়িত অন্যান্য সেবাগুলো। এভিয়েশন, হসপিটালিটি, হোটেল ইন্ডাস্ট্রি, ট্রান্সপোর্টেশন, রিভার ট্রান্সপোর্টেশনসহ আরও অনেক খাত বিপর্যস্ত। আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটক আসেন লাখ দুয়েকের মত। বিজনেস ট্রাভেলার আসেন। মাইস ( মিটিং ইনসেনটিভ কনফারেন্স এক্সিভিশন ) ট্যুরিজমও বাতিল হয়েছে। পর্টন শিল্প সামগ্রিকভাবে বড় ধরনের হুমকির সম্মুখিন। এর শেষ কোথায় তা এখন পর্যন্ত অনুমান করা যাচ্ছে না। বড় বড় হোটেলগুলোর অবস্থা খুব খারাপ, বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন নেই তাদের। বিদ্যুৎ, রক্ষনাবেক্ষণ, বেতন, ভাতাসহ তাদের দৈনন্দিন যাবতীয় খরচ চলছে। কিন্তু আয় কমে গেছে। বাধ্য হয়ে হয়তো কর্মী ছাঁটাই করবে। তাতে তো ওভারহেড কস্ট কমবে না। এক বড় অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি জানান, অন্য শিল্প আর হসপিটালিটি শিল্প এক না, ভিন্ন। করোনার ত্রাস স্তিমিত হয়ে আসার পর অন্যান্য শিল্পের সুযোগ আছে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার। কিন্তু হসপিটালিটি শিল্পে তা নেই। তাছাড়া কেবল দেশের অবস্থা ভাল হলে তাতে দিন ফিরবে না এই শিল্পের। তারপরও স্বাভাবিক হতে সময় লেগে যাবে কয়েক মাস।