বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি,সিলেট: বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রায় ২০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব হয়েছে বুধবার। দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি বড় বিলকে ঘিরে গোয়াহরি দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে অবস্থান করা স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের সমাগমও হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই একযোগে ‘পলো’ দিয়ে বিলে মাছ ধরতে নামেন।
বেলা ১১টায় একযোগে শিশু, কিশোর থেকে বৃদ্ধরা পলো নিয়ে বিলে মাছ ধরতে নামেন। এ সময় হইহুল্লোড় ও হাঁকডাকে সরব হয়ে ওঠে বিলের আশপাশ। বিলে মাছ ধরতে নামা অনেকের হাতে পলোর পাশাপাশি ছিল হাতাজাল ও ছুলফি। ধরা পড়ে বোয়াল, শোল, গজার, রুই, কাতলা, কার্পুসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। বিলে মাছ ধরা হয় বিকেল পর্যন্ত।
দৌলতপুর ইউনিয়নের সদস্য ও গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা মো. গোলাম হোসেন জানান, এবার গত বছরের তুলনায় বিলে বেশি মাছ ধরা পড়েছে। পলো বাওয়া আয়োজনকে ঘিরে গ্রামে একধরনের পুনর্মিলনী হয়। ঘরে ঘরে স্বজনেরা বেড়াতে আসেন। বিলে মাছ ধরায় অংশ নিতে গ্রামের অনেক বাসিন্দা দেশ ও প্রবাস থেকে আসেন। এটিই গ্রামবাসীদের কাছে অনেক আনন্দের দিন।
গোলাম হোসেন আরও বলেন, ‘পূর্বপুরুষের সংস্কৃতি আমরা প্রায় ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে পালন করে আসছি। আগামী দিনেও এটি অব্যাহত রাখবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। নিয়ম অনুযায়ী বিলে আগামী ১৫ দিন পর আবার পলো নিয়ে একযোগে মাছ ধরতে নামবেন সবাই।’
বিলপাড়ে কথা হয় সিলেটের লামাকাজি এলাকার বাসিন্দা সৌদি আরবপ্রবাসী আবুল লেইছের (৪৫) সঙ্গে। তিনি জানান, তার স্ত্রী গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা। তার শ্বশুরবাড়িতে পুরুষ মানুষ না থাকায় তিনিই উৎসবে অংশ নিয়েছেন। এর আগেও তিনি শ্বশুরবাড়ির হয়ে মাছ ধরতে নেমেছেন। মাছ ধরায় অংশ নিতে মঙ্গলবারই স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে চলে আসেন। আবুল লেইছ বলেন, মাছ ধরা তাঁর শখ। মাছ ধরায় অংশ নিতে প্রায় প্রতিবছরই সময় মিলিয়ে দেশে আসার চেষ্টা করেন। মাছ ধরা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি একটি বোয়াল ও একটি কার্পু মাছ ধরেছেন।
গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মো. আবদুল্লাহ বলেন, পলো বাওয়া উৎসবে অংশ নিতেই তিনি প্রায় ২০ দিন আগে দেশে এসেছেন। আজ তিনি তিনটি মাছ পেয়েছেন। তাঁর বাবা-দাদাও এ বিলটিতে উৎসবে মাছ ধরে আসছেন। আগামী দিনে তাঁর ছেলে ও নাতিরাও উৎসবে অংশ নিয়ে মাছ ধরবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আবদুল্লাহ বলেন, ‘চাইলেই বাজার থেকে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে খাওয়া যায়, কিন্তু অনেকেই পলো বাওয়ার যে আনন্দ কিংবা মাছ ধরার একধরনের ভালো লাগা, সে বিষয়টি বুঝবেন না।’