বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
পাঞ্জাবে প্রথম এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করল ভারতীয় বায়ুসেনা। চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে একযোগে মোকাবিলা করতে ও প্রতিপক্ষের মিসাইল ও যুদ্ধবিমানগুলিকে মাঝ আকাশে ধ্বংস করতেই এই পদক্ষেপ।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, “এস-৪০০ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের প্রথম স্কোয়াড্রন পাঞ্জাব সেক্টরে মোতায়েন করা হচ্ছে। চিন ও পাকিস্তান থেকে সম্ভাব্য বিপদের একযোগে মোকাবিলা করতেই হাতিয়ারটিকে মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সম্পূর্ণরূপে কাজ শুরু করবে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি।” বলে রাখা ভাল, চলতি মাসের শুরুর দিক থেকেই ভারতে আসতে শুরু করেছে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমটির বিভিন্ন অংশ। রাশিয়া থেকে সমুদ্রপথ ও বিমানে করে হাতিয়ারগুলি আনা হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যেই প্রথম এস-৪০০ স্কোয়াড্রন ভারতীয় ফৌজের হাতে চলে আসবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা মিসাইল সিস্টেম ‘এস- ৪০০ ট্রায়াম্ফ’ ভারতে পাঠানো শুরু করেছে রাশিয়া। সামরিক বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এর ফলে এক ধাক্কায় অনেকটাই শক্তি বেড়ে গেল ভারতীয় বায়ুসেনার। শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার ক্রুজ মিসাইল মোকাবিলায় ‘এস- ৪০০’ মিসাইলের বিকল্প নেই। ভারতীয় বায়ুসেনা এমন একটি সময় এই ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পাচ্ছে, যখন প্রতিবেশী চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে গোলমাল চলছে। তা নিয়ে লাদাখ, অরুণাচলে এখনও উত্তপ্ত পরিস্থিতি।
এদিকে, রুশ মিসাইল সিস্টেম নিয়ে ভারত ও আমেরিকার টানাপোড়েন তুঙ্গে। নয়াদিল্লির উদ্বেগ বাড়িয়ে সম্প্রতি আমেরিকা ইঙ্গিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার তৈরি ওই ক্ষেপণাস্ত্র কিনলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তেও হতে পারে ভারতকে। তবে ভারত প্রথম দেশ নয় যার বিরুদ্ধে এই এস-৪০০ (S-400) কেনার জন্য নিষেধাজ্ঞার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আমেরিকা। ভারতের আগে রাশিয়ার কাছ থেকে এই অস্ত্র কেনে তুরস্ক। যার ফলে ইতিমধ্যে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে ন্যাটো সদস্য সেই দেশকে। এদিকে, এই বিষয়কে খুব বেশি আমল দিতে নারাজ বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁদের দাবি, রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তি বাতিল করবে না ভারত। মস্কোর সঙ্গে পরীক্ষিত বন্ধুত্ব বজায় রেখেই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতীয় বিশ্লেষকদের মতে উত্তর সীমান্তে এস-৪০০ মোতায়েনের মাধ্যমে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও পাক-আফগান সীমান্তের কাছে পেশোয়ার শহরকে টার্গেট করা যাবে। একেএস চান্ডাল মনে করেন, দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে বর্তমানে ভারতে যে অস্ত্র ভাণ্ডার রয়েছে তা দিয়ে শুধুমাত্র পাকিস্তানের আকাশে থাকা কোনও লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করা সম্ভব। অবশ্য এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হাতে এস-৪০০ ডিফেন্সের সমকক্ষ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নেই। তাদের কাছে রয়েেছ স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম। পাকিস্তান আর্মিতে অক্টোবরে যুক্ত হয়েছে এইচকিউ-৯ পি সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম। এর আওতা ১০০ কিলোমিটার।একেএস চান্ডাল জানিয়েছেন, এস-৪০০ ডিফেন্স সিস্টেম দিয়ে ভারত চীনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
চীনের কাছে অবশ্য আগে থেকেই রাশিয়ার এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমের আওতায় চীন তাদের দু’টি ইউনিট মোতায়েন রেখেছে তিব্বতে। লাদাখের প্যাংগং লেক থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে একটি ইউনিট চীন মোতায়েন করেছে। অপর ইউনিটটি তারা মোতায়েন রেখেছে অরুণাচল সংলগ্ন নিনচে এলাকায়।এদিকে, ডিসেম্বরে ভারত সফরে আসছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জানা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে গুরুত্ব পাবে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা।প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে প্রথম রুশ বাহিনীতে এস-৪০০ অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৪ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে মস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নয়াদিল্লি। এর পর আমেরিকার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে পুতিনের দিল্লি সফরের সময় এ বিষয়ে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার চুক্তি সই হয়েছিল।